নির্মল সরকার
পুরোপুরি শীত না পড়লেও শীতের ইতিমধ্যেই জেকে বসেছে। হেমন্তের বিদাযের পর শীত জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। ইতিমধ্যেই গ্রাম-গঞ্জে শীতের তীব্রতা অনুভুত হচ্ছে। শীতের প্রভাবে পিঠা রসিকদের ঠান্ডা হাতে গরম পিঠার স্বাদ গ্রহন শুরু হয়ে গেছে। কুয়াশার চাদরে গ্রাম বাংলা আচ্ছাদিত। শীতের পোশাক গায়ে তুলেছে গ্রামের মানুষ। ধুনকাররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে লেপ-তোষক বানাতে। বৃদ্ধি পেয়েছে তুলার দাম। হাট-বাজারে গুলোতে গরম কাপড়ের সমারোহ ঘটেছে বিপুল পরিমাণে। শীত নিবারণে পুরাতন গরম কাপড় অসহায়ের সহায়। কবি কে আর প্রার্থনা করতে হয়না, হে সূর্য ! উত্তাপ দিও, রাস্তার ধারে ঐ উলঙ্গ ছেলেটা কে।
পাবনার বেড়া উপজেলার হাট-বাজারের ফুটপথের দোকান গুলোতে শীতের পোশাক নিয়ে সেজে উঠতে দেখা যাচ্ছে। হাট-বাজারগুলোতে পুরাতন গরম পোশাকের দোকানিরা ইতিমধ্যেই তাদের দোকানে পুরাতন গরম কাপড় তুলে বেচা কেনা শুরু করেছেন। নতুন আনা পুরাতন গরম পোশাকের পাশাপাশি গত শীত মৌসুমে অবিক্রিত পোশাক গুলোও দোকান গুলোতে তোলা হয়েছে। শীত ধীরে ধীরে বেশী পড়বে আর এ বছরে আনা কাপড়ের গাইট খোলা হবে। বেড়া সিএন্ডবির পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সানিলার সাইফুল ইসলাম নয়ন জানান,চিটাগং পাইকারী পুরাতন কাপড়ের মার্কেট থেকে পুরাতন কাপড়ের গাইট কেনা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের গাইট। বিভিন্ন ধরনের পোষাকের গাইট আলাদা ভাবে র্মাকিং করা হয়ে থাকে। চট্টগ্রামের পুরাতন কাপড়ের পাইকারি বাজারে আলাদা আলাদা ভাবে পুরাতন পোষাকের গাইট বিক্রি হয়। সোয়েটার, মোটা গেঞ্জি,ট্রাউজার,কোর্ট ও জ্যাকেটের আলাদা আলাদা গাইট। ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পোশাকের ভিন্ন ভিন্ন গাইট। পুরাতন গরম কাপড়ে গাইট সারা দেশের ব্যবসায়ীরা চট্রগ্রাম থেকে নিয়ে যায় বলে পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ি বনগ্রামের আব্দুর রউফ জানায়। কাশীনাথপুর বাজারের পুরাতন গরম কাপড় ব্যবসায়ি তারেক মিয়া জানায়,প্রথমে কিনে এনে গাইট বাড়িতে খুলে কাপড়ের সাইজ ও ধরন অনুযায়ী সটিং (আলাদা আলাদা) করতে হয়, আলাদা ভাবে নিয়ে তুলনামূলক ভালো ও নিখুঁত পোশাক গুলো কে বাছাই করা হয়। গাইটে বাঁধার জন্য কাপড় গুলোতে বাঁজে ভাবে ভাঁজ পড়ে যায়, বাড়িতে সে গুলোকে ইস্ত্রি করে যথা সাধ্য নিখুত করে তুলতে পোশাক গুলোকে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসি। বেড়ার কাশিনাথপুর হাটে পুরাতন কাপড় বিক্রেতা আজমত আলী কাছ থেকে জানা যায় যে, পুরাতন কাপড়ের পাশাপাশি সে কম দামে শিশুদের নতুন উলের পোশক বিক্রি করে থাকে। নতুন উলের পোশাকের দামের ব্যাপারে তিনি বলেন ভালো পুরাতন কাপড়ের পোশাকও অনেক দামেই বিক্রি করা হয়, পাশা পাশি নতুন কম্বল কিনে শিশুদের পোশাক এখন স্থানীয় ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। আবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টারি বিদেশে পাঠানোর জন্য তৈরি করা গরম পোশাকের ত্রুটির কারণে পাঠাতে না পেরে খোলা র্মাকেটে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং সারা দেশে এ সব গরম পোশাক সামান্য বেশি দামে বিক্রি হয়। শিশুদের পোশাকের ব্যাপারে অভিবাবকরা পুরাতন এর চাইতে নতুন পোশাক কিনতে বেশি আগ্রহী হতে দেখা যায়। সিএন্ডবি পুরাতন জামা কাপড়ের বাজারে পুরাতন জ্যাকেট ও কোর্ট বিক্রেতা আমিন উদ্দিন বলেন, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কিশোর যুবারা বিশেষ করে যারা মোটর সাইকেল চালায় তারা জ্যাকেটের প্রতি বেশি আগ্রহী। মান অনুযায়ী এক একটি ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা দামে জ্যাকেট বিক্রি হয়ে থাকে। পুরাতন কোর্ট প্রায় সব বয়সের মানুষ কিনে থাকে। কোর্ট ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। কখনো কখনো পুরাতন কাপড়ের গাইটে নিখুত কোর্ট, জ্যাকেট পাওয় যায়।
বেড়া বাজারে লেপ-তোষকের কারিগর ও বিক্রেতারা ইতিমধ্যেই লেপ-তোষক তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ি শান্তা ইসলামের সাথে কথা বলতে গেলে দেখা যায়,সে হাঁক ডাক করে করিগরদের কাজ দেখা শোনা করছে। তুলার দাম, কাপড়ের দাম ও ক্রেতার চাহিদা নিয়ে তার সাথে কথা হয়। বেড়া সিএন্ডবি বাজারে লেপ-তোষক ব্যবসায়ি সুজনের দোকানে গেলে দেখা যায়, তার কর্মচারিরা কেউ কেউ তুলা ছাড়ানো মেশিনে (ধুনা) দলা পাকানো তুলাকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে,কেউ বা আবার লেপ-তোষক সেরাই করছে। তুলার দাম নিয়ে সুজন, শান্তা সহ লেপ-তোষক ব্যবসায়িদের সবার কথাই প্রায় একই ধরনের। শীতকালে তুলা ও লেপ-তোষক বানানোর লালশালু ও মোটা কাপড়ের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায় কিন্তু এবার শীত মৌসুম পড়ার সাথে সাথেই তুলা ও কাপড়ের দাম অনেকটাই উদ্ধমুখী।
বেড়া উপজেলার হাট-বাজারে গুলোতে লেপ-তোষক ও পুরাতন কাপড় বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। ক্রেতা সমাগমও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত যত বেশী পড়বে পুরাতন পোষাকের দোকান গুলোতে মানুষ শীত নিবারনের জন্য ততো পোষাক কিনবে বলে ব্যবসায়ী জাহিদ জানান। পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই শুধুমাত্র শীত মৌসুমে পুরাতন গরম কাপড়ের ব্যবসা করে থাকে। দেশে পুরাতন পোশাক আমদানী করায় শীতের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র অসহায় মানুষ। শীত নিবারণ করতে না পেরে আর কাউকে মরতে হয়না।