স্টাফ রিপোর্টার:
পাবনা জেলা কারাগারে অবৈধ সুযোগ সুবিধা না দেয়ার কারনে কারারক্ষী নাজমুল (২৮) কে খুর মেরে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় কারারক্ষী নাজমুল হোসেন জেলা কারাগারে হাজিরা দিয়ে শহরের বড় বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বাসায় ফেরার পথে রবিউল মার্কেটের সামনে পৌঁছালে আবির নামের এক যুবক তাকে ডেকে বলে, “নাজমুল ভাই, কেমন আছেন ?” কুশলাদি বিনিময় শেষে আবির মার্কেটের ভিতর ঢুকে পড়ে। আবির অস্ত্র মামলার আসামী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার পাবনা জেলা কারাগারে হাজত বাস করে । তার গোটা পরিবারই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
আবির কথা বলে ২০ হাত যেতে না যেতেই আরেক সন্ত্রাসী সজল নাজমুলকে ডাক দিয়ে বলে- নাজমুল ভাই, আজ সন্ধ্যায় জেলখানার আরপি গেটে ঝামেলা হয়েছে, জানেন কিছু! নাজমুল উত্তরে বলে কিসের ঝামেলা, কার সাথে ঝামেলা? জানিনাতো কিছু। ভাই থাকেন যাই। সাথে সাথেই সজল ধমকের সুরে বলে ওঠে এই দাঁড়া, কই যাবি? বলেই পকেট থেকে ক্ষুর বের করে বাম বুকের ওপর টান দেয়। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পর পর ৫ জায়গায় স্ট্যাব করে সন্ত্রাসী সজল। এসময় আরও ৪/৫ জন সন্ত্রাসী পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আহত নাজমুল জানায়, “ওই অবস্থায় আমি বুক চেপে ধরে সজলকে বলি আমাকে মারছেন কেন? এসময় সজল পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার দিকে তাক করে বলে, শালা চিল্লাবি না চিল্লালে শালাকে এখানেই মেরে ফেলবো। মনে রাখিস আমাদের লোকজনকে সুযোগ সুবিধা না দিলে জেলখানার সবগুলোকে এভাবে মারবো। ততক্ষণে জ্যামে বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তা। আমি ভীড়ের মধ্যে আঁকা বাঁকা জটলা পার হয়ে এক রিক্সায় উঠেই বলি,ভাই তাড়াতাড়ি জেলখানার দিকে চলে যান। তখন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা বাজে।
সজল শহরের দক্ষিণ রাঘবপুরের দূর্ধর্স সন্ত্রাসী বলে জানা যায়। জামিনে বের হয়েই এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেছে বলে জানায় এলাকাবাসী। সজল অস্ত্র ও মাদক মামলাসহ অনেকগুলো মামলার আসামী হিসেবে অসংখ্যবার জেলখানায় ছিল বলে জানায় কারারক্ষী নাজমুল হোসেন।
মাত্র কয়েকদিন আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়েছে। হাসপাতালের বেডে নাজমুলের পাশে থাকা কারারক্ষী রাশেদুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আরপি গেটে এসে এক যুবক চিৎকার করে অশ্লীলভাবে গালাগালাজ করতে থাকে। এ সময় সে বলতে থাকে, শালা সুবেদারকে মারবো, রাজ্জাক ওস্তাদকে মারবো, সাদেক ওস্তাদকে মারবো। এখানে উল্লেখ্য যে, সাদেক নামের ব্যক্তি প্রধান কারারক্ষী। রাজ্জাক নামের ব্যক্তিও প্রধান কারারক্ষী। এসময় আরপি গেটের রক্ষীরা মনে করে সে মেন্টাল পেসেন্ট। সেজন্যে তাকে সরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কারারক্ষী নাজমুল বড় বাজার থেকে কেনা কাটা সেরে সাড়ে ৭টার দিকে গোপালপুর শিশু শিক্ষা নিকেতনের পাশে রবিউল মার্কেটের দক্ষিণে পৌঁছালে তার এমন হাল করে সন্ত্রাসী সজীব।
নাজমুল (২৮)বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোঃ আব্দুর রশিদ প্রধানের ছেলে। শহরের গোপালপুর এলাকার ইমব্যাংকমেন্ট রোডে সে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে।
এ ব্যাপারে পাবনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানান, “বর্তমানে আমরা কারাগারকে একটা শোধনাগার হিসেবে ব্যবহার করি। কারাগারে ঢোকার পর কয়েদী- হাজতীদের অন্যায় অপকর্মে জড়িত হওযার সুযোগ নেই। দুষ্টচক্র এমন আইন না মেনে অনেক সময় অবৈধ সুযোগ সুবিধার পাওয়ার চেষ্টা করে। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে মামরা হয়েছে। পাবনা সদর থানা মামলা নং ২০ তারিখ ১১/১০/২০২৪ ইং।” জেল সুপার আরও জানান, ১২ তারিখ রাত ১ টার দিকেও নাকি মোটর সাইকেল নিয়ে এসে আরপি গেটে আমাদের কারা রক্ষীকে হুমকী দিয়ে গেছে, শাশিয়ে গেছে এই বলে যে,জেলখানার ভিতরে থাকা তাদের পার্টনাররা যা বলে তা না শুনলে অন্যান্যদেরও নাকি একই হাল করা হবে। তিনি বলেন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা না পেয়েই সজল নামের সন্ত্রাসী এমন নির্মমভাবে আক্রমণ করেছে কারারক্ষী নাজমুলকে। এ বিষয়ে মামলা হলেও এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পাবনা জেলা কারাগারে অবৈধ সুযোগ না দেয়ায় কারারক্ষীকে খুর মেরে গুরুতর জখম করলো সন্ত্রাসীরা
পাবনা সদর
3 Mins Read
Previous Articleযুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment