এম এ আলিম রিপন,সুজানগরঃ পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গাজনার বিলে বছরের এ সময়ে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় শুঁটকি চাতালগুলোতে। জেলের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় বাছাই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন শ্রমিকরা। তবে এবার মৌসুম শুরু হলেও গাজনার বিলে কাঙ্খিত পরিমাণ মাছ মিলছে না। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি উৎপাদন। এ অঞ্চলে পুঁটি, টেংরা, টাকি, খলিসা, শোল, বোয়াল, সহ নানা ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ শুঁটকি করে তা দেশ-বিদেশে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। তবে এবারে মৌসুমের শুরুতে এখানকার বেশির ভাগ শুঁটকির চাতালগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাই শুঁটকি চাষিরা বলছেন, এবারে তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। শনিবার সরজেমিনে সুজানগর-নাজিরগঞ্জ সড়কের বালুরমাঠ শুঁটকির চাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে শুঁটকি তৈরির চাতাল। কয়েকটি চাতালে সামান্য পুঁটি মাছ রোদে শুকানো হচ্ছে। অন্যগুলোতে সব চাটাই গোছানো। যেসব শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদের চাতালগুলো অধিকাংশ ফাঁকা পড়ে আছে। মাছের অভাবে তারা শুঁটকি তৈরি করতে পারছেন না। শুঁটকি চাষি ফারুক শেখ বলেন, গত মৌসুমে ৬৬ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি করলেও এবারে মাছের সংকট থাকায় মনে হচ্ছ এ মৌসুমে ২০ লাখ টাকার মাছও বিক্রি করা যাবে না। গত কয়েকদিন হলো বাজারে কিছু কিছু করে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তার মধ্যে পুঁটি মাছের সংখ্যাই বেশি। এ জন্য অল্প করে তা চাতালে শুকানো হচ্ছে। শুঁটকির পুরোনো ব্যবসায়ী ও চাতাল মালিক আব্দুল করিম বলেন, প্রতি বছরই এ সব চাতালে টেংরা, পুটি, খলসে, টাকিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের শুঁটকি করা হয়। এখানকার শুটকির কদর রয়েছে সারা দেশে। এই শুঁটকি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে যায়। এবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে না। এ কারণে আড়তেও তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার শুটকির চাতালে প্রতিদিন ৯০ মণ কাঁচা মাছের প্রয়োজন। অথচ সর্বোচ্চ ৫ মন থেকে ৭ মণ মাছ সংগ্রহ করতে পারছি। তাও আবার বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। এ বছর ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন টুকু জানান, এক মণ পুঁটি শুঁটকি প্রস্তুত করতে নারী-পুরুষ শ্রমিকসহ গত বছর খরচ পড়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। আর এবারে মাচের সংকট দেখা দেওয়ায় মানভেদে ১মণ পুঁটি কিনতেই বর্তমানে লাগছে ৪০০০-৫০০০টাকা প্রায়। তবুও চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মাছ মিলছে না। এ সময় তিনি সরকারের নিকট সহজ শর্তে তাদেরকে ঋণ প্রদানের দাবি জানান। শুঁটকি শ্রমিক আলামিন বলেন, চাতালে কাজ করেন পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা। প্রতিদিন শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। এ আয় দিয়েই তারা সংসার খরচ চালান। এ বছর মাছের সংকটে চাতালে তেমন কাজ নেই, তাই পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন তারা। উপজেলা মৎস্য অফিসার নূর কাজমীর জামান খান শনিবার বলেন, গাজনার বিলের মাছের শুঁটকির সুনাম ও চাহিদা দুটোই রয়েছে। ফলে আমরা এই শুঁটকির মান বৃদ্ধির জন্য চাতাল মালিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে না পারলে গাজনার বিলে মাছ সংকট আগামী দিনে আরো বেশি দেখা দিবে।