হেলালুর রহমান জুয়েল
চলনবিলের চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। তাতে খেলা করছে ছোট-বড় নৌকা। নৌকাগুলো বিনোদনপ্রেমিদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চলনবিলের বুকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু বিনোদনপ্রেমিরা। বর্ষায় পাল্টে গেছে চলনবিল অঞ্চলের রুপ। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। সন্ধ্যায় বিলের পানিতে ডুবছে সূর্য। অপরুপ দৃশ্য চারিদিকে। বিনোদন পিপাসুদের ভিড় বেড়েছে চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টে। বিলে শত শত নৌকা ভেসে চলেছে। এই বর্ষায় পানিতে ভরে উঠেছে চলনবিলের ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত খাল-বিল। নতুন পানির সঙ্গে এসেছে শোল,বোয়াল,ট্যাংরা,পুঁটি,কই,শিং,মাগুর,চাপিলা,পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। চলনবিলের খাল ও নিম্নাঞ্চল এখন প্লাবিত। পুরো বিল পানিতে ভরে উঠেছে। নতুন পানির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ দেখা যাচ্ছে। মাছ ধরারও যেন ধূম পড়েছে।
বিলপাড়ের লোকজন বর্ষার আগমনে আলাদা আলাদা পেশা বেছে নিচ্ছেন। কেউ নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করছেন,কেউ বা করছেন মানুষ পারাপার। কেউ আবার নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এ ছাড়া কেউ মাছ শিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল বানিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয় হাট-বাজারে। বিনোদনের জন্য নৌকা প্রস্তুত রেখেছেন অনেকে। প্রতিদিনই চলনবিলের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করছেন বিনোদন পিপাসুরা। সরেজমিনে চলনবিল ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
বর্ষা মৌসুমে বিলের দুর্গম এলাকাগুলোর পথঘাট পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় একমাত্র বাহন হয়ে উঠেছে নৌকা। এবার নৌকার চাহিদা একটু বেশি মনে হচ্ছে। তাই অনেকেই বর্ষা আসার আগেই নৌকা মেরামত ও তৈরির কাজ করেছেন। বিলাঞ্চলের হাট-বাজারে মৌসুমি মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জাল কেনাবেচার হিড়িক। হাট-বাজারে মাছ শিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল বিক্রি হচ্ছে। বাদাই, কারেন্ট,ফাঁসি, চায়না দুয়ারী,তেউরিসহ নানা ধরনের জাল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে দেশে তৈরি কোঁচ, জুতি, টেঁটা, চাঁই, খৈলশানী, দোয়ার ও ভাইর। নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী আর কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহারে বিলীন হচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ।
চাটমোহর উপজেলঅর নিমাইচড়া গ্রামের আঃ মতিন বলেন,বর্ষার মৌসুমে চলনবিল এলাকায় তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। তাই এ সময় বিলপাড়ের গরিব লোকজন মাছ ধরার পেশাকে বেছে নেয়। ডিমওয়ালা মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একশ্রেণির অসাধু ও শৌখিন মৎস্যজীবী অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ধরছেন।
এদিকে চলনবিল অঞ্চলে এখনো বিনোদন পিপাসুদের এখন সরব উপস্থিতি। সকাল হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে দল বেঁধে চলনবিল ঘুরতে আসছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। সারাদিন বিলের পানিতে ঘুরছেন। রান্না হচ্ছে নৌকায় কিংবা বিলপাড়ে। বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন রমরমা। সকল বয়সের মানুষ এই বর্ষায় চলনবিলে বেড়াতে আসছেন। বিল সৈকতগুলো এখন জমে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের কলরবে। বদলে গেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিল চলনবিলের রুপ।