এম এ আলিম রিপন ঃ তীব্র দাবদাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুজানগর উপজেলার বেশিরভাগ নলকূপ দিয়ে উঠছে না পানি । কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছেনা প্রয়োজনীয় পানি। অবস্থা প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। পরিবেশগত নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, পৌরসভা সহ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হাজার হস্তচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। উপজেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৪০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় এ স্তর পৌঁছালেই পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে গেছে পানির স্তর। প্রতি বছর তীব্র তাদাবদাহে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরোও প্রকট আকার ধারণ করে। বেশিরভাগ এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি বর্তমানে ১০০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা। বিশেষ করে সুজানগর পৌর শহর ও প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। সুপেয় পানির সংকট দেখা দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাদের (সাবমার্সিবল পাম্প) কেনার মত সামর্থ নেই এমন নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের। পৌরসভার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা শ্রী চন্দন সরকার বলেন,টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল চাপতে চাপতে ঘাম ঝড়ে যায় তবু পানি উঠেনা। প্রতিবেশীদের নলকূপ(সাবমার্সিবল পাম্প) থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খাবার পানি আনতে হয়। পানির অভাবে ঠিকমতো গোসল সহ অন্যান্য কাজ-কর্ম করতে না পারায় আমরা বেশ দুর্দশার মধ্য আছি । অঞ্জলী রাণী নামে অপরএক আদিবাসী নারী বলেন, শুনেছি সরকার থেকে বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষদের পানির চাহিদা পূরণের জন্য বিনামূল্যে সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে দেওয়া হয়। আমাদের এলাকায় সরকারিভাবে অথবা উপজেলা পরিষদ থেকে একটি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে স্থানীয় আদিবাসী পল্লীর ৫০টির অধিক পরিবারসহ এ এলাকার শত শত দরিদ্র পরিবার উপকার পেত। উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর খলিলপুর গ্রামের বাসিন্দা সালমা খাতুন বলেন, টিউবওয়েল তো দূরের কথা,এখন বিদ্যুৎ চালিত পানির পাম্পেও পানি পাওয়া কষ্টকর। গরম শুরুর পর থেকেই হস্তচালিত নলকূপে আগের মতো পানি উঠছে না । রাতে অথবা ভোরে সামান্য পানি ওঠে। প্রবীণ সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক পল্লীগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আব্দুস শুকুর বলেন, কাঠফাটা রোদে মাঠ,ঘাট,পথ,খাল,বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে ফসলি ক্ষেতও ক্ষতির সম্মুখীন। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে খরতাপে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রাণীকূল। রওশন ট্রেডার্স এর কর্ণধার আব্দুস সোবাহান জানান, চৈত্র মাসের তীব্র দাবদাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাবমার্সিবল পাম্পের চাহিদা বেড়েছে। আগে যেখানে মাসে ২-৩ টি পাম্প বিক্রয় হত, সেখানে এখন সাপ্তাহে ১০-১৫ টি সাবমার্সিবল পাম্প বিক্রয় হচ্ছে। সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাত হলে পানির এ সংকট থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।