স্টাফ রিপোর্টার:
গত ২২ মার্চ (শুক্রবার) যথাযথ গুরুত্বের সাথে পাবনায় পালিত হয়েছে বিশ্ব পানি দিবস। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বেলা ১১ টায় শোভাযাত্রা পরবর্তী এক আলোচনা সভা ডিডি এলজি (উপসচিব) মোঃ সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার সহকারি পরিচালক মোশারফ হোসেনের তথ্যবহুল উপস্থাপনায় এবং জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এডিসি সার্বিক মোঃ শরিফ আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার, নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট আব্দুল হামিদ খান, দৈনিক সিনসার সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম প্রমুখ।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোঃ মোতাহার হোসেন, বিআরআরডি’র উপপরিচালক রেজাউল করিম, বিএডিসির উপপরিচালক শামিম আহমেদ, জনশক্তি ও কর্মসংসংস্থানের সহকারি পরিচালক আখলাকুজ্জামান, সহকারি তথ্য কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোঃ নওফেল হোসেন, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ প্রধান সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ মোতাহার হোসেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানা সহ বিভিন্ন অফিস ও সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
ডিডি এলজি সাইফুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি। আগেকার দিনে নদীকেন্দ্রীক বসতি গড়ে উঠতো, সভ্যতাও গড়ে উঠতো নদীকে কেন্দ্র করেই। বর্তমানে যা রুপকথার গল্পে পরিণত হয়েছে। তবে সরকারের গৃহীত ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় ২০৪১ সালের মধ্যেই পানি সমস্যার সমাধান হয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। পানি যাতে অপচয় না হয় সে ব্যাপারে তিনি সবাইকে সচেতনতার সাথে পানি ব্যবহারের আহ্বান জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ইছামতি পুনরুজ্জীবিত করন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে আজ নদীগুলো মরে যাওয়ার পেছনে আমাদের মানবসৃষ্ট কারণও দায়ী। তিনি বলেন, প্রতিবছরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন জেলার নদী ও খাল-বিল খনন করে চলেছে। স্ব স্ব এলাকার মানুষ যদি নদী তথা খাল বিলের প্রতি সজাগ হয়, সচেতন হয়, তবেই আমাদের দেশে নদীর অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব।
নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর তিন ভাগই জল আর এক ভাগ স্থল, তবুও সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে, এখন গভীর নলকূপ ছাড়া পানি পাওয়াই দূষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট আব্দুল হামিদ খানবলেন, প্রাণের উৎস পানি। পানির অপর নাম জীবন কথাটা সনাতন হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।কারণ কেবল পানের জন্যই নয়, দৈনন্দিন জীবনে ঘর গেরস্থালী থেকে কৃষিকাজ তথা নানান কাজে পানির অপরিহার্যতা অস্বীকার করার উপায নেই। বিজ্ঞানীরা চাঁদে ও মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাচ্ছে, পানির অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেখানে পানির সন্ধান পেলেই মিলবে প্রাণের অস্তিত্ব। পানি পাওয়া গেলেই পৃথিবীর মানুষের পরবর্তী বাসস্থান হবে চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহ।
তিনি বলেন, ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। রাজশাহীর পদ্মা নদীর টি-বাঁধে গিয়ে দাঁড়ালে চোখে পড়ে কেবল ধু-ধু বালুচর।
তিনি উল্লেখ করেন, পাবনার ইছামতী নদীর উৎসমুখ পদ্মা নদী। যেখানে ছিল একসময় গহীন পদ্মা সেখানে আজ বিরান ভূমি। প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ দাউ দাউ করে জ্বলছে ইটভাটার আগুন। এক সময়ের কীর্তিনাশা পদ্মা যা আজ মরা গাঙে রুপ নিয়েছে। ফলে ইছামতি নদীও মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, পাবনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ইছামতি নদীকে পুনরুজ্জীবিতকরতে পাবনার মানুষের দাবি মেনে নিয়ে ১৫৫৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। যা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেইমাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। এজন্য বাপা’র সেক্রেটারি সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি ছোট বড় সকল নদী পরিকল্পনা মাফিক ও দুর্নীতিমুক্তভাবে ড্রেজিং করে বর্ষাকালের পানি ধরে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলার চন্দ্রাবতী নদীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘চন্দ্রাবতী নদী’ ওই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য নদী। কিন্তু দিনে দিনে দখল দূষণে নদীটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন,অবিলম্বে চন্দ্রাবতী নদীকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, নদীটিকে দখল-দূষণ মুক্ত করে খননের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন,জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাবনার বিভিন্ন নদীর প্রায় ৩১টি পয়েন্টেকে জলমহাল বানিয়ে ইজারা দেয়ার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এটি জেলা প্রশাসনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন যতদ্রুত সম্ভব এসব ইজারা বাতিল করে নদী বাঁচাতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
পাবনায় বিশ্ব পানি দিবস পালিত
পাবনা সদর
4 Mins Read
Previous Articleসুজানগরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত -৩
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment