শফিক আল কামাল : মহান বিজয়ের মাসে “ এসো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি” প্রতিপাদ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বদেশ প্রীতি বৃদ্ধি ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানো, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) এর আওতায় জেলা তথ্য অফিস পাবনা কার্যালয় এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রি.) বেলা ১১টায় পাবনা কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসা মিলনায়তনে “এসো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট পাবনা জেলা শাখা’র সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান (হাবিব)।
পাবনা কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসা’র অধ্যক্ষ মোঃ আনছারুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ পাবনা জেলা শাখা’র সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোমিনুর রহমান বরুণ। অনুষ্ঠাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার মোঃ সামিউল আলম।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে জাতির সূর্য সন্তানগণ বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আমাদের পূর্ব বাংলার কোন কাজই ভাল চোখে দেখতো না। পূর্ব বাংলার মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে আয়ের সিংহভাগ নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। এমনকি কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে সম্মানজনক পদে পূর্ব বাংলার জনগণকে বিতারিত করা হতো। এসব শোষণ নির্যাতনের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে দিয়ে পূর্ব বাংলার জনগন সোচ্চার হতে থাকে। ২৫ মার্চ কালো রাতে ঢাকা সহ সারা দেশে পাক হানাদার বাহিনী পূর্ব বাংলার ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের উপর বর্বোরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। পাবনায় বানী সিনেমাহল সংলগ্ন টেলিগ্রাম অফিস আক্রমণ করলে, আমরা মুক্তিযোদ্ধাগণ তীব্র পতিরোধ গড়ে তুলি এবং সবকটা পাক সেনাদের হত্যা করে টেলিগ্রাম অফিস মুক্ত করি। পরে শানিরদিয়ার নকশালদের সাথে যুদ্ধ হয়। এখানে আমাদের কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে সারাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছে, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সুজানগরে যুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছি। তখনো পাবনার দখল ছাড়েনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যেন পাবনায় ঢুকতে না পারেন, সেজন্য জেলার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে পাকিস্তানি বাহিনী। বিজয়ের ২ দিন পর পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেনি পাবনায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা। আমরা পাবনার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য তাগিদ দিলেও তারা প্রাণভয়ে আত্মসমর্পণ করেনি। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নান্দা পাবনায় আসলে পাকিস্তানি বাহিনী তার নিকট আত্মসমর্পণ করে। পাবনায় পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের পর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকে পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।