নির্মল সরকার
যমুনায় জেগে উঠা ডুবোচরের কারনে নৌ-যান চলাচলে বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে,বিঘিœত হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবন যাত্রা। পানি বৃদ্ধি ও প্রবাহ না থাকায় যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর, ডুবোচর জেগে ওঠায় যমুনায় নৌ-যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থানে পৌঁছাতে ৫ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। সময় ও জ্বালানী খরচ বেশী হওয়ার কারনে অনেক মাঝি নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছে। চরাঞ্চলের মানুষকে পায়ে হেটে চর পাড়ি দিয়ে একাধিক বার নৌকায় পাড় হয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
বেড়ার ঢালারচর ইউনিয়নের পদ্মা-যমুনার সংযোগস্থল থেকে যমুনা-হুড়াসাগরের মিলনস্থল হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর,চৌহালী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত যমুনায় অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠায় নদী পথে যোগাযোগের সরলীকরণ নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। যমুনা নদী পার হয়ে চরাঞ্চলে যেতে একাধি ডুবোচর জেগে ওঠায় চর ঘুরে যেতে হয় গন্তব্যে। কোথাও কোথাও ২শ’ গজ দুরত্বে যেতে প্রায় দুই কিলোমিটার নদীপথ ঘুরে যেতে হয়। যমুনার পানি ও পানি প্রবাহ কম থাকায় এবং ডুবোচর জেগে ওঠায় স্্েরাতস্বিনী যমুনার পানির ধারা একাধিক বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়ে চলছে। ডুবোচর জেগে উঠার কারণে যমুনায় প্রতিনিয়ত নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বেড়া উপজেলার একটি নৌবন্দর ও দুইটি বড় আমদানি রপ্তানী নৌঘাট ও পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার ও শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন নৌ বন্দর থেকে পণ্যবাহী ছোট-বড় নৌকা, ট্রলার,পণ্যবাহী ছোট-বড় কার্গো জাহাজ, ওয়েল ট্যাংকার মালামাল আনা নেওয়া করে থাকে। নৌ পথে দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরের সাথে উত্তরাঞ্চলের পণ্য পরিবহনে একমাত্র একমাত্র নৌ পথ এই যমুনা নদী। বেড়ার ঢালারচর এলাকায় পদ্মা-যমুনার নদীর সংযোগ স্থল থেকে বাঘাবাড়ী ঘাট নৌবন্দরে যাওয়ার পথে নাকালিয়া,মোহনগঞ্জ,মালদহপাড়া,পেচাকোলা ও চরপেচাকোলা এলাকায় একাধিক ডুবোচর নৌ চ্যানেল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই নৌ চ্যানেলটি সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ-কে ড্রেজার দিয়ে প্রায় সারা বছর খনন কার্য চালিয়ে যেতে হয়। এর পরও প্রতিবছর এই নৌপথে একাধিক পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ,ওয়েল ট্যাংকার যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়ে। যমুনার চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ হাটবাজারে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়,চিকিৎসা সেবা,অফিস-আদালতে ও স্কুল কলেজে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন যমুনা নদী পাড় হয়ে আসতে হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি উপজেলার ওমরপুর,সাদিয়াচাঁদপুর,মুন্সিগঞ্জ,মাকিগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা,চরকাটারী, নাগরপুর উপজেলারমাইঝিলি,আটপাড়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঙ্গালারচর,সোনাতুনী,ধিতপুর,হাতকোড়া ,বিয়ানপুর ধলাই,বেনটিয়া,চরতারটিয়া,বেড়া উপজেলার চরপেচাকোলা,চরনাকালিয়া,খড়বাগান,শোলদানা,চরসাফুল্লা সহ পার্শ্ববর্ত্তী উপজেলার চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনে বেড়া উপজেলার কাজীরহাট, নগরবাড়ীঘাট, রাকসা,কৈটোলা, নাকালিয়া, বেড়া ডাকবাংলা ঘাট,বেড়া বৃশালিকা আমদানী রপ্তানী ঘাটের মাধ্যমে বেড়া বাজার,বেড়া সিএন্ডবি হাটবাজার,কাশিনাথপুর হাট-বাজার,বাঁধের হাট সহ বিভিন্ন হাট-বাজার পণ্য বেচা কেনা করতে আসে। প্রতিদিন অগনিত মানুষ বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স,কাশিনাথপুর ডায়াবেটিক সেন্টার,সানিলা রওশআরা ছাত্তার চক্ষু হাসপাতাল সহ উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরাঞ্চলের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন যমুনা নদী পার হয়ে লেখা পড়ার করতে আসে। জেলা সদর ও উপজেলা সদর এমন কি উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর ইউনিয়ন পরিষদে আসতেও যমুনা নদী পাড় হয়ে আসতে হয়। ডুবোচরের কারনে প্রতিদিন যমুনা নদী পাড় হয়ে আসা মানুষকে অনেকটা সময় নষ্ট করতে হয় নদী পার হতে। ডুবোচরের কারনে ১ ঘন্টার নদী পথ পাড় হতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা চৌহালী উপজেলার উমরপুর চরের রাজ্জাক সরদারের সাথে কথা হলে সে জানায়,আমাদের চর থেকে চৌহালী বা শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। সে তুলনায় বেড়া আসা অনেক সহজ। যদিও এসময় নদীতে পানি কম থাকায় যমুনায় অনেক জায়গায় চর জেগে উঠায় চর ঘুরে বেড়া আসতে প্রায় ৩ ঘন্টা বেশী সময় লাগে। বেড়া সিএন্ডবি হাটে বেগুন বিক্রি করতে আসা দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী গ্রামের রওশন আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়,বেড়া আসতে ৩ বার নদী পার হতে হয়। নদীতে ছোট বড় চর জেগে উঠেছে সরাসরি নৌকা নিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। এতে হাট ধরা যায়না,তাই চরে হেটে এসে ছোট নৌকা বা খেয়া নৌকায় পাড় হয়ে আসি। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে আসা সোনাতুনী চরের মাহমুদ আলী, বিয়ানপুর চরের জাবেদ চরনাকালিয়ার মোস্তফা,শোলদানা চরের কাইউম,খরবাগানের আবুসামা,চরসাফুল্লার বাবুশেখ সহ অনেকের সাথেই কথা হয়, বেড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার,হাসপাতাল ও উপজেলা পরিষদে চরাঞ্চল থেকে আসা মানুষের সাথে। চরাঞ্চল থেকে নদী পার হয়ে এপারে আসা নিয়ে প্রায় সবার অভিজ্ঞতা বা চিন্তা একই ধরনের। তারা বলেন, বর্ষা মৌসুমে এপারে আসতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়না বরং সামান্য প্রয়োজনেও আমরা উপজেলা সদর সহ এপারের হাট-বাজার অফিস আদালতে আসি, সর্বপরি সামান্য রোগ-ব্যাধিতেও চিকিৎসা নিতে আসি। এই শুস্ক মৌসুমে যমুনা নদীতে অসংখ্য চর জেগে উঠায় নদী পার হতে অনেক জলপথ ঘুরে আসতে হয়। সঠিক সময়ে নিদিষ্ট জায়গায় পৌঁছানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এই শুস্ক মৌসুমে আরও বেশী সমস্যায় পড়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যার এপারের স্কুল কলেজে পড়তে আসে। বাড়ী থেকে ভোরে বের হয়ে স্কুল কলেজ শেষ করে বাড়ী ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,যা নিয়ে অভিবাবকেরা প্রায়শঃ দুচিন্তায় পড়েন।
শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই যমুনা অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠায় নৌযান সহ নদী পারা-পারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।