এম এ আলিম রিপন
পাবনার সুজানগরে মা,বাবা ও ছেলে একইসঙ্গে এবারে এইচএসসি পাস করেছেন। বাবা বিএম ফারুক হোসেন জিপিএ-৪.৭১, মা মোছা.জাকিয়া সুলতানা জিপিএ-৪.২৫ এবং ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম জিপিএ- ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এমন সাফল্যে পরিবার-পরিজনসহ এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন বাবা-মা ও ছেলে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা থেকে বাবা ও মা এবং ছেলে উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ(ইংলিশ ভার্ষন) থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখাযায়, বাবা বিএম ফারুক হোসেন ৪.৭১,মা মোছা.জাকিয়া সুলতানা ৪.২৫ এবং ছেলে ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু জানান, বিএম ফারুক ও তার স্ত্রী জাকিয়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। এবং ছেলে সহ একই সঙ্গে বাবা-মা পাশ করার এই সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।
বাবা-মার সঙ্গে এইচ এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় পাশ করে উচ্ছ্বসিত ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম । সে জানায়, একই বছর আমার সঙ্গে আমার বাবা ও মা এইচএসসি পাশ করায় সত্যিই আমি অনেক খুশি। মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমার খুব ইচ্ছা ছিল এইচএসএসসি পাশ করার। কিন্ত মা-বাবার সংসারে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পরে আমি আমার স্বামী ও ছেলের পরামর্শে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এবং আমার স্বামী সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখায় ভর্তি হই। এবং এইচএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছি, তাই আমি আন্দদিত।
বাবা বিএম ফারুক হোসেন বলেন, অল্প বয়সে ২০০২ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর সংসারের হাল ধরার কারনে ব্যবসা করায় তখন আর লেখাপড়া হয়ে উঠেনি। আমার ২ ছেলে ও এক মেয়ে । স্ত্রী ও আমি একই সঙ্গে কলেজে ভর্তি হই। এবং এক সঙ্গে স্ত্রী ও বড় ছেলের সঙ্গে একই বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করে আমি অনেক খুশি। তিনি আরো বলেন, সমাজে চলতে অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। সত্যি কথা বলতে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। পাশ করার ফলে আমাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি এবং আমার স্ত্রী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পড়ালেখা চালিয়ে যাব ইনশআল্লাহ।
এ বিষয়ে সুজানগর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুস শুকুর বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স কোন বাধা নয়। এমনকি বিয়ে-সংসার কিংবা সন্তান লেখাপড়ায় অন্তরায় হতে পারে না। এমনটাই করে দেখালেন ফারুক-জাকিয়া দম্পতি।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বুধবার বলেন, একই সঙ্গে বাবা-মা ও ছেলে এইচ এসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাদের সামনে তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের এমন কৃতিত্বকে সবার সম্মান করা উচিত। এবং তাদের দেখে অন্যরাও উচ্চ শিক্ষায় অগ্রসর হবেন বলে প্রত্যাশা করি। উল্লেখ্য,পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামের মৃত জানু বিশ্বাসের ছেলে বিএম ফারুক হোসেন ২০০২ সালে ১০ শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের ময়েন উদ্দিন মোল্লার কন্যা মোছা.জাকিয়া সুলতানাকে । ২০০৩ সালে তাদের দুইজনেরই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় এবং সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি তাদের। পরে ২০২২ সালে খয়রান লুকমান হাকিম টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এই দম্পতি।