এম এ আলিম রিপন ঃ পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে হারিয়ে যাচ্ছে উপজেলার শতশত বিঘা কৃষি জমি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে এভাবে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মানচিত্র থেকে উধাও করে দিচ্ছে কৃষি জমি। এতে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তা-ঘাটও। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। যদিও কৃষি জমি রক্ষায় সরকারের কড়া নির্দেশ রয়েছে। এরপরও সেগুলো রক্ষা হচ্ছে না। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাজনার বিলের মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট, দুলাই ইউনিয়নের পাইকপাড়া, রাণীনগর ইউনিয়নের ভাতশালা,শারীরভিটা, বাঘলপুর বেলতলা, নাখারাজসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। সংশ্লিষ্টরা ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ২৫ থেকে ৪৫ ফুট গভীর গর্ত করে কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ফসলি জমি চিরতরে মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে। এভাবে গভীর গর্ত করায় পাশের কৃষি জমিও ভেঙে পড়ছে। এছাড়া মাটি ব্যবসায়ীদের থাবা থেকে বাদ যাচ্ছে না খাস জমি,খাল এবং নদ-নদীর তীরও। এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এভাবে কৃষি জমি নষ্ট করায় উপজেলায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সরকারি গেজেটে প্রকাশিত মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইটের কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হলে তিনি অনধিক ২ বৎসরের কারাদন্ড বা দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাচাঁমাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হইলে তিনি এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। এসব আইন থাকার পরও ভূমিদস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাটি কাটার এসব কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে অবৈধভাবে মাটি পরিবহনের ট্রাক ও ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় শব্দে আমরা ঠিকমত পড়ালেখা ও ঘুমাতে পারিনা। দিনের বেলায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় ধোলায় জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ২৫ হাজার ৮০ হেক্টর আবাদি কৃষি রয়েছে, কৃষি জমির ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি পরিমান থাকে টপ সয়েল। টপ সয়েল কেটে ফেলার কারণে জমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে। পাবনা সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে অবৈধভাবে মাটি কাটায় রাণীনগরের বিজয়,ফরিদসহ উপজেলার একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার জানান, অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটায় অভিযান পরিচালনা করে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে রাতের আধাঁরে মাটি কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।