ছোট বেলা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়ে উঠা নিজের প্রিয় শহরে হেঁটে হেঁটে স্মৃতি বিজরিত আড্ডার জায়গাগুলো ঘুরে দেখলেন এবং সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আড্ডা দিলেন নিজের বন্ধু ও এক সময়ের সহকর্মীদের সঙ্গে। এ সময় তিনি হাসি, ঠাট্টা ও নষ্টালজিয়ায় মেতে ওঠেন।
এ সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, পাবনা প্রেসক্লাব ও পাবনার সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার আজীবন ও অন্তরের সম্পর্ক। আমি প্রাণ দিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠানকে লালন করি তার মধ্যে পাবনা প্রেসক্লাব অন্যতম। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, আমি পাবনা জেলার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। এই জন্য কোন সমালোচনা বা পিছু কথা আমি মনে রাখিনা। আমি আমার সাধ্যমত জেলার উন্নয়নে কাজ করবো। আমি ইছামতি নদীর স্যেন্দর্যবর্ধন কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দিয়েছি। যাতে করে একটি দৃষ্টি নন্দন শহর হয়। আমি ৫‘শ বেডের পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহায়তায় পাবনার উন্নয়নে আমি কাজ করেই যাবো।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, আমি পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন তৈরিতে আমার সার্বিক সহায়তা থাকবে। তার জন্য যাকে বলা প্রয়োজন আমি বলবো।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ আড্ডায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন এ সব স্মৃতি চারণ করেন।
পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সালাহ উদ্দিন আহমেদ, প্রেস সচিব মো: জয়নাল আবেদীন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগৈর সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, পাবনা ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি লায়ন বেবী ইসলাম, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মীর্জা আজাদ, সহসভাপতি শহীদুর রহমান শহীদ, পাবনা প্রেসক্লাব সাবেক সম্পাদক আব্দুল মতীন খান, সাবেক সম্পাদক উৎপল মির্জা, সাবেক সম্পাদক আখিনুর ইসলাম রেমন, সাবেক সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা, প্রেসক্লাবের সহ সম্পাদক সরোয়ার উল্লাস, কল্যাণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুইট, কল্যান সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল, ক্রীড়া সম্পাদক কলিট তালুকদার, দফতর সম্পাদক কানু সান্যাল, পাবনা রির্পোটার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, দৈনিক বিবৃতি সম্পাদক ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, দৈনিক সিনসা সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম, দৈনিক ইছামতির নির্বাহী সম্পাদক নির্বাহী সম্পাদক মোসতাফা সতেজ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মশিউর রহমান খান বিপ্লব, দৈনিক মর্নিং টাচের সম্পাদক এমজি বিপ্লব চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাবনা সার্কিট হাউজ থেকে গাড়িতে চড়ে প্রথমে তার অন্যতম আড্ডাস্থল পাবনা ডায়াবেটিকস সমিতিতে যান। সেখানে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর বের হয়ে পায়ে হেঁটে আসেন আরেক আড্ডাস্থল লক্ষী মিষ্টান্ন ভান্ডারে। দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সেখান থেকে যান প্যারাডাইস সুইটে। সেখানে তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং নিজের প্রিয় ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া খান।
এরপর রাত ৮টার কিছু সময়ের কিছু আগে প্রবেশ করেন স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় সংগঠন পাবনা প্রেসক্লাবে। সেখানে সাংবাদিক, বন্ধু ও এক সময়ের সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। পুরোনো দিনের কথা মনে করে স্মৃতি রোমন্থন করেন। এক সময় তিনি সাংবাদিকতা করতেন, প্রেসক্লাবের ছাদে আড্ডা দিতেন, সেসব কথা উল্লেখ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা প্রেসক্লাবে আড্ডা শেষে নির্ধারিত গাড়িতে সার্কিট হাউজে ফেরেন রাষ্ট্রপতি।
এসব পরিদর্শন ও আড্ডার সময় তার বন্ধু পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, আরেক বন্ধু পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বন্ধু মুক্তার হোসেনসহ অন্যান্য বন্ধুবান্ধব ও নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ভোলানাথ ঘোষ বলেন, আমাদের প্রিয় মানুষ রাষ্ট্রপতি আজ আমার দোকানে এসেছিলেন। এসে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন, কেমন আছি জানতে চাইলেন। খোঁজখবর নিলেন। খুবই খুশি হয়েছি।
ভোলানাথ ঘোষ আরও বলেন, আমার এই দোকানে তিনি এক সময় আড্ডা দিতেন। আমাদের এখানকার সকালের নাস্তা তিনি খুব পছন্দ করতেন। এত বড় মানুষ হয়েও তিনি এখনও তেমনি নিরহংকারী আছেন। আমাদের দোকানকে তিনি এখনও মনে রেখেছেন ভেবে খুব ভাল লেগেছে।
প্যারাডাইস সুইটসের মালিক আবু ইসহাক শামীম বলেন, রাতে রাষ্ট্রপতি আমাদের দোকানে আসেন। সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। রাজনৈতিক ও ছাত্রজীবনে তিনি আমাদের দোকানে বসতেন, আড্ডা দিতেন। আমাদের দোকানের ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া ছিল তার খুব পছন্দের। আজকেও তিনি অল্প করে ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া খেয়েছেন। তার আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি আমাদের পাবনা প্রেসক্লাবের ২২তম সদস্য। তিনি পাবনায় আসলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি সাংবাদিক বান্ধব রাষ্ট্রপতি। কারণ তিনি নিজেও ১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতা করতেন। আজকেও প্রেসক্লাবে আড্ডা দিতে গিয়ে তিনি পুরোনো স্মৃতি তুলে ধরলেন। হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলেন। প্রেসক্লাবের ছাদে আড্ডা দিতেন, চিড়া মুড়ি খেতেন। আজকেও তিনি চিড়া মুড়ি খেয়েছেন। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে সময় কাটান। প্রেসক্লাব ভবনটি অর্পিত সম্পত্তি। সেটি তিনি অবহিত আছেন। সে বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি ভবনটি প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার দুপুরে পাবনায় আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনদিনের সফরে তিনি স্থানীয় কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫মে প্রথমবার চারদিনের এবং ২৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নিজ জেলা পাবনায় এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি।
পাবনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার আজীবন অন্তরের সম্পর্ক-রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন
পাবনা সদর
5 Mins Read
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment