নাটকের গল্প আবর্তিত হয়েছে এক আগন্তুককে ঘিরে। নাটকের দৃশ্যে আগন্তুকের হঠাৎ উপস্থিতিতে দর্শকদের এক অদ্ভুত ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। নাটকের দৃশ্যে আগন্তুক এক চিকিৎসালয়ে আসেন তার কন্ঠনালীতে সূর্য আটকে গেছে। সেটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আকুতি করছেন। বহুকাল ধরে তিনি সেটা বহন করে চলেছে তার কন্ঠে। কন্ঠনালীতে আটকে থাকা সেই সূর্য তিনি বের করতে চাইছেন অথবা হৃৎপিন্ডে রেখে দিতে চান। এমন অদ্ভুত দাবিতে নানা বিদ্রুপ করতে থাকেন তিনি। আগন্তুকের কণ্ঠনালীতে আটকে থাকা সূর্যের একটা ফয়সালা করতে চান তিনি। এভাবেই গল্পের বিভিন্ন চরিত্র দৃশ্যকাব্যে প্রবেশ করেন নানা চরিত্রে থাকা অভিনয় শিল্পরা। এই আগন্তুক আমাদের কাছে সৃষ্টির বিবর্তনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান। যেমন মানুষ অনাদিকালের সুন্দরকে বয়ে চলেছে কণ্ঠনালীতে। যান্ত্রিক নগরের সভ্যতা, পুঁজিবাদী আস্ফালন, ধর্মান্ধতা আমাদের অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিচ্ছে। অস্তিত্বে সংকটে পড়া মানুষ এক সময় মানবীয় রুপ থেকে পশুর রুপ ধারন করছে। কণ্ঠনালীতে সূর্যকে ধারণ করা মানুষ একসময় লোভ ও ক্ষোভের দর্শন প্রচার করেছেন। এমনি নানা সংকট সংঘর্ষ আর মিলনের গল্পে অভিনয় করেন দর্শকদের সামনে।
নাটকের নির্দেশক দীপক সুমন বলেন, ৭০ বছর আগে লেখা নাটকটি এখন সময় উপযোগী বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে। আমাদের সবার ভেতরে অনেক না বলা কথা আটকে রয়েছে যা মুখ দিয়ে বলে ফেলতে পারলে সূর্যদয় হয়ে যেতে পারতো। আবার সেটি যদি বুকের ভেতরে হৃদপিণ্ডে রাখা যেতো তাহলে অসীম সাহসীকতার সাথে পথ চলতে পারতাম। নাটকের গল্পের সাথে মানুষের না বলা কথার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এই সমাজে আমাদের না বলা কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। সেখান থেকেই আমাদের গলায় সেটি সূয়েরমত আটকে থাকছে। সেই সূর্যকে বের করতে চাই কন্ঠনালী থেকে তবেই হয়তো মুক্তি মিলবে জাগতিক সমাজের মানুষের।
ঢাকা তীরন্দাজ রেপর্টারি নাট্যদলের এটি ৬ষ্টতম প্রযোজনা। পাবনাতে ছিলো নাটকটির ৩৮ তম মঞ্চায়ন। নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে নির্দেশক দীপক সুমন। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন ১০জন এর মধ্যে একজন নারী। সংলাপ প্রধান এই নাটকটিতে আলোক প্রক্ষেপণ ও আবহাওয়া সঙ্গীদের মধ্যদিয়ে প্রাণবন্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। এই নাটকটি মঞ্চয়ানের জন্য সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পাবনা বন্ধু এস এসসি-৯৫ ব্যাচ।