সনদপত্র বিহীন জনবল নির্মূল,নীতিমালা প্রণয়ন, বেতন কাঠামো নির্ধারণসহ ৭ দফা দাবিতে সিভিল সার্জনের নিকট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশনের পাবনা শাখার নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে জেলার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ানের নিকট স্মারকলিপি জমা দেন তারা। এরপর সিভিল সার্জন অফিসের সামনে একটি আলোচনা সভা করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “জুলাই বিপ্লব” এদেশের মানুষের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সার্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন সবাই। স্বাস্থ্য সেবাকে গণমূখী করতে হলে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট জনবলের অধিকার সুনিশ্চিত করা জরুরি।
তারা আরও বলেন,স্বাস্থ্যসেবা একটি “টিম ওয়ার্ক” চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। রোগীদের সেবাদান কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রোগ নির্ণয় যার পুরোধা বলা হয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদেরকেই। পর্দার অন্তরালে কাজ করা এ পেশাজীবীরা কেবল ২০১৯ সালের ভয়াবহ কোভিডকালীন সময়ে হয়েছিলো প্রতিদিনের মিডিয়ার শিরোনাম। সে অবস্থায় জীবণের মায়া ত্যাগ করে মানুষের জীবণ বাঁচাতে ছুটে চলা প্রথম সারির যোদ্ধাদের অন্যতম একটি পেশা। এ পেশায় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ পেশায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বে-সরকারি চাকুরীর নীতিমালা ঠিক নেই, এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সনদপত্র বিহিন জনবল দিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। এখনো বেতন বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে, এমতাবস্থায় আমাদের পেশার উন্নতির জন্য গত ১৩ই সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার সকল মেডিকেল টেকনোলজিস্টদেরকে নিয়ে এক সাধারণ সভার আয়োজন করি। সভায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন পাবনা নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে।
সেবার এ গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীদের প্রতি দীর্ঘকাল ধরে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তার যথাযথ আশু অবসান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার নিকট দাবি উপস্থাপন করেছি। দেশের মানুষের কল্যাণে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক,পেশাজীবিদের আত্মমর্যাদা, সামাজিক অবস্থান সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবায় তাদের গুরুত্ব বিবেচনা করে মেডিকেল টেকনোলজি পেশাকে বৈষম্যমুক্ত করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদান করেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন, পাবনা জেলা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয়কবৃন্দ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রেজওয়ানুল হক, রায়হানুল কবির, তামজিদ নাঈম, আশরাফুল ইসলাম, রতন আলী, পল্লব কুমার প্রমুখ।
পাবনার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ্ দেওয়ান বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশনের পাবনা শাখার নেতৃবৃন্দ তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিবো। সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট চেষ্টা করা হবে।
তাদের দাবিসমৃহ-: সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি/ রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং ব্যতীত কেউ ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজিতে ডিউটি করতে পারবেনা, সনদপত্র বিহীন জনবল নির্মূল করা, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জন্য বে-সরকারী চাকুরীর নীতিমালা প্রণয়ন করা, নারী ও পুরুষ উভয় টেকনোলজিস্টদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন বিশ (২০) হাজার টাকা নির্ধারণ করা, সকল মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কর্মঘন্টা “শ্রম আইন ২০০৬” অনুযায়ী আট(০৮) ঘন্টা নিশ্চিত করা, সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি ও বাৎসরিক বিশ(২০) টি ঐচ্ছিক ছুটিসহ সকল প্রকার ছুটি রোটেশন অনুযায়ী নিশ্চিত করণ করা, সুন্দর কর্ম পরিবেশ তৈরী করা, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিবেশ ও অভিযোগ গ্রহণ করা, ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি ও বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজি কোর্সের সাথে সংযুক্ত ইন্টার্ণ ভাতা প্রদান করা।