আব্দুস সাত্তার মিয়া
এক হৃদয়বিদার কাহিনী। মায়ের আহাজারি, ভাই বোনের কান্না, স্ত্রীর দীর্ঘশ্বাস আর পিতা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দী জীবনের কাহিনী। সুখের আশায় শুকুর আলী নামের এক গরিব পিতার সন্তান সাইদুল নিজ গ্রামের প্রতিবেশী লোকমান হোসেনের পুত্র দালাল মনসুর আলীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব বিক্রি করে ও ঋণগ্রস্ত হয়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ২০২২ সালে সৌদি আরব যাওয়ার এক মাসের মাথায় নিখোঁজ হয়। সাইদুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে বাবা শুকুর আলী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল প্রায়, বাধ্য হয়ে তাকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, মায়ের আহাজারিতে বাতাস ভারী, স্বজনরা পাগল প্রায়। এলাকাবাসি জানায়, দালাল চক্র এলাকায় খুবই প্রভাবশালী।
স্বজনদের অভিযোগ, প্রায় মাসাধিককাল আগের ঘটনা কিন্তু সাইদুলের লাশ এখনো ফেরত পাওয়া যায় নাই কিনবা কোন সন্ধান নাই। উপরন্ত দালাল ও সাথীরা সৌদি আরব থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে এবং নিদাবী কাগজে স্বাক্ষর দিতে সাইদুলের পরিবারের উপর চাপ দিচ্ছে। টাকা দিতে না পারায় এবং নিদাবী কাগজে সাক্ষরে অস্বীকার করায় দালাল চক্রের লোকজন সাইদুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারধর করে।
গত ১১ সেপ্টমবর সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের কচুয়ারামপুর গ্রামের এক নিঃস্ব পরিবারে শোকের মাতম চলছে। সাংবাদিকদের দেখেই ভুক্তভোগী সাইদুলের মা সবেদা খাতুন বুক চাপড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলতে থাকেন তোমরা আমার ব্যাটাকে (সাইদুল) এনে দাও, আমার ব্যাটার লাশ চাই, ওরা আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন মুর্ছা যাওয়ার উপক্রম, তাকে এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে মুখের ভাত জোগাতে হচ্ছে। সাইদুলের বোন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের কোন হদিস নাই, মৃত্যু হলে আমারা লাশ চাই। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া সাইদুলের মেয়ে মাসুরা খাতুনের অভিযোগ, স্কুলে যাওয়ার সময় দালালের ছেলেরা আমাকে নিয়ে টিটকারি ও কটুক্তি করে, উত্তপ্ত করে, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।
প্রতিবেশী দালালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাইদুলের পরিবার নিঃস্ব হলেও দালালের পিতা লোকমান, দালাল মনসুর ও তার পরিবারের আলিশান বাড়ি রয়েছে। দালাল মনসুরের বড় ভাই মুঞ্জু জানায়, সাইদুলের নিকট থেকে ৭ লাখ বা ১০ লাখ টাকাও নিতে পারে কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর কি হয়েছে আমরা জানিনা। দালাল মনসুরের পিতার লোকমান জানায়, আমার ছেলের মাধ্যমে সাইদুল বিদেশ গেছে তারপরে তার কি হয়েছে আমরা জানি না, শুধু শুনেছি মারা গেছে, তার লাশ আনতে ৩ লাখ টাকা বা নিদাবী কাগজে স্বাক্ষর দাবী করার কথা অস্বীকার করলেও উপস্থিত এলাকাবাসী সবাই তা জানেন বলে জানান।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদেশ যাওয়ার পর সাইদুলের কি হয়েছে জানিনা, তবে এতদিনেও লাশ ফেরত না আসা সন্দেহজনক। তিনি আরো বলেন, দালালরা এলাকায় প্রভাবশালী এবং ভুক্তভোগী সাইদুলের পরিবারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। আমাকে আগে কেউ কিছু জানায় নাই, তবে পরে সব শুনেছি।
এলাকাবাসীর দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত করে অসহায় ও নিঃস্ব সাইদুলের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আইননুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।