নির্মল সরকার
উত্তরের হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা, কুয়াশার চাঁদর আর ঘাসের উপর শিশির বিন্দুতে প্রকৃতি নতুন আমেজে আর্বিভুত হচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীতের পদধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে জনপদ থেকে জনপদে।
শীতের এ মৌসুমকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের লেপ-তোশকের ব্যবসায়ীরা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কর্ম চাঞ্চল্য বিরাজ করছে তাদের দোকান গুলোতে। লেপ তোশকের দোকানীরা হরেক রকমের কাপড় এবং তুলার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। ধুনকাররা মনের সুখে তুলা ধোনা আর লেপ তোশক সেলাইয়ের কাজে মগ্ন আছেন। সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলার হাট বাজার গুলোতে। নাকালিয়া বাজারের লেপ তোশক ব্যবসায়ী ওলিউল বলেন,গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলা এবং কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্ডার কম,এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টির মত লেপ-তোশকের অর্ডার পেয়েছি এবং সরবরাহ করেছি । অপর এক ব্যবসায়ী ফারুক সরদার বলেন, চলতি মৌসুমে সব কিছুর মূল্য ঊর্ধ্ব গতির কারণে লেপ তোষকের ক্রেতা কম পাচ্ছি। একটা ৪ হাত ৫ হাত লেপ তৈরিতে সব মিলিয়ে খরচ আসে ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। পুরো শীত মৌসুমে ১শ’ থেকে ১শ’৫০ টি লেপ তোশকের কাজ পেয়ে থাকি কিন্তু এ বছর মনে হয় কম হবে। বাজারে লেপ ক্রয় করতে আসা আজগার আলী বলেন,গত বছর ভালো তুলার ৫ হাত ৬ হাত মাপের একটি লেপ ১৪শ’ টাকায় কিনেছিলাম এ বছর সে লেপ ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আরেক ক্রেতা ফজর মোল্লা বলেন দু’বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ের জন্য লেপ-তোশক, জাজিম, বালিশ ক্রয় করেছিলাম ৫ হাজার টাকায়,এ বছর ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য একই জিনিস ক্রয় করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। বেড়া পৌর এলাকার মোহনগঞ্জ বাজারের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী তোকান আলী বলেন,বড় লেপ ১৯শ’ টাকা,সিঙ্গেল লেপ ১২শ’ টাকা,বাচ্চাদের লেপ ১হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে তুলার প্রকারভেদ অনুযায়ী লেপ-তোশকের দাম কম বেশি হয়। বেড়া বাজারে তুলা,কাপড় ও লেপ তোষকের দোকানের মালিক শান্তা ইসলাম বলেন, গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে লেপ তোষকের কাপড় ও তুলার দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। কেজি প্রতি তুলার দাম প্রকার ভেদে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং প্রতি গজ কাপড়ে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে এখন লেপের চাইতে কম্বলের ব্যবহার বেশী হওয়ায় লেপের ব্যবহার কিছুটা কমে গেছে। গত শীত মৌসুমে পাইকারি খুচরা সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার লেপে বিক্রি করে ছিলাম কিন্তু এ মৌসুমে লেপ তোশক তৈরীর তেমন কোন বড় অর্ডার পাইনি এথন পর্যন্ত তবে ৩ হাজার পিচ লেপের অর্ডার পাবো বলে আশা করি।
ব্যবসায়িরা জানান,শীত মৌসুমের আয় দিয়েই সারা বছরের সংসারের খরচ,কর্মচারির বেতন,দোকান ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ মেটাতে হয়। শুরুতেই বেচা কেনার এমন মন্দা ভাবের কারনে আগামী দিনের ভাবনায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছি। এখন আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেলেও বছরের বাকি ৯ মাস অলস সময় পার করতে হয়।