চাটমোহর প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে আমন ধান কাটা শুরু হলেও চালের বাজারে প্রভাব পড়েনি। ধানের হাটেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। হিসাব কষে এবার লোকসানের কথাই বলছেন কৃষকরা। ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে এসেছে হরতাল-অবরোধ।
চলনবিল অঞ্চলে শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। ধান মাড়াই, বাছাই আর বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী। একদিকে ধান কাটা হচ্ছে অপরদিকে সেই ধান মাড়াই করা হচ্ছে। বাজারভেদে মোটা আমন ধান ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের ধানি গোল্ড ধান এক হাজার ৫০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। মোটা স্বর্ণা ধান ১১শ’ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন,এবার বৃষ্টির অভাবে সেচ দিয়ে আমন উৎপাদন করা হয়েছে,বাড়তি দামে সার ও ডিজেল কিনতে হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ধানের দামে হতাশ কৃষক। এ বছর আমনের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এ প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছেন। তারপরও অনেক কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না আমন ধান বিক্রি করে।
হাট-বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই।
চাটমোহরের কৃষক মামুনুর রহমান জানান,ধানের দাম নেই। বাজারে ক্রেতাও নেই। এবার ধানে লোকসান না হলেও লাভের মুখ দেখা হবে না। চাটমোহরের মির্জাপুর হাটে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ধান বিক্রি করতে আসা তাড়াশ উপজেলার কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ‘মৌসুমে আগাম জাতের বিনা ৯০ দানের দাম বেশি হওয়া এবারও সেই ধান চাষ করেছি। কিন্তু পাইকার বা মিল মালিকরা ধানের দাম বলছেন না।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৃষক মাহাতা আলী জানান,‘আমন ধান চাষ হচ্ছে সম্পূর্ণ বৃষ্টিনির্ভর। কিন্তু এবার মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি। ডিজেলচালিত সেচ পাম্প দিয়ে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। চাল কিনলে তো মাছ কেনা যায় না। এবারও ধানের দাম কম। সাধারণত ধান বেচে কৃষাণীর জন্য নতুন শাড়ি, শীতের কাপড়,মাছ-মাংস কেনা,বাচ্চাদের খেলনা আর রঙিন জামা কেনা হয়। কিন্তু লোকসানে ধান বেচে ঋণ পরিশোধ করা নিয়েই চিন্তায় আছি।’
চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকার কৃষক আঃ সালাম বলেন, ‘সেচ দিয়ে ধান চাষ করে, এখন লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য। ধান বেচে ছেলের স্কুলের বেতন দিতে হবে। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। অবরোধের কারণে হাটবার ছাড়াও ধানের ক্রেতা পাওয়া যায় না। ট্রলি দিয়ে ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে আগের চেয়ে ট্রলি ভাড়া বেড়েছে। সব দিক দিয়ে আমরা লোকসানে পড়েছি। এবার হাটে আগাম ধানের ন্যায্য দাম মিলছে না।
একাধিক সূত্র জানায়,আমন মৌসুমে সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৩০ টাকা কেজি ধরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম দাঁড়ায় ১২শ’ টাকা মণ। সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় ধানের দাম কমে গেছে। ফড়িয়া ও পাইকাররা কম দামে ধান কিনে মজুত করছেন। যখন কৃষকরা তাদের ধান বিক্রি শেষ করবেন। তখন সরকারি খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা ফঁড়িয়াদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে,এ বছর চাটমোহর উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যামাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭২৫ হেক্টর,আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১০০ হেক্টর,আর আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এ মাসুমবিল্লাহ জানান,লক।স্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হচ্ছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এখন ধানের দাম কিছুটা কম হলেও,দাম বাড়বে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে।
চলনবিলাঞ্চলের হাট-বাজারে আমন ধানের দাম কম, দুশ্চিন্তায় কৃষক
চাটমোহর
3 Mins Read
Previous Articleচাটমোহরে অবৈধ ইটভাটায় দেদারছে পুড়ছে কাঠ!
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment