এম এ আলিম রিপন
পাবনার সুজানগরে নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য গড়ে উঠা ১০ টাকায় থাকার হোটেল দৃষ্টি কেড়েছে সবার। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল তাতিবন্দ ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে এ হোটেলগুলো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেশের উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী পাবনার সুজানগর উপজেলা। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী পেঁয়াজের চারা রোপনের এই মৌসুমে এবং মার্চ থেকে এপ্রিল পেঁয়াজ মাঠ থেকে উঠানোর মৌসুমে রাজশাহী,বগুড়া,নাটোর রংপুর,গাইবান্ধা,কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নি¤œ আয়ের শত শত দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ শ্রম বিক্রি করতে আসেন এই উপজেলায়। প্রতিদিন হাড় ভাঙ্গা কঠোর পরিশ্রম করে দরিদ্র শ্রমজীবী এ সকল মানুষেরা যে টাকা রোজগার করেন। নিজ গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সংসার খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। সেখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার হোটেলে থাকাটা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। কাজ করতে এসে অনেক শ্রমিক স্থানীয় সরকারি স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোলা বারান্দায় কনকনে শীতে রাত্রি যাপন করে থাকেন। আর এ জন্য ওই সকল দরিদ্র অসহায় শ্রমজীবী মানুষদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে মধুপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন ১০ টাকার থাকার হোটেল। স্থানীয় মধুপুর গ্রামের আবুল হোসেন নামে এক হোটেল মালিক শনিবার জানান, অনেক দূর দূরান্ত থেকে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা এ অঞ্চলে কাজ করতে আসেন কিন্তু তাদের থাকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে এ হোটেল চালু করেছেন। প্রতিদিন ১০ টাকার বিনিময়ে একজন শ্রমজীবী মানুষ এখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন। প্রতিটি টিনের ঘরের মাটির উপরের খরের বিছানার এ থাকার হোটেলটিতে একসঙ্গে ১২০ থেকে ১৫০ জন মানুষ রাত্রি যাপন করে থাকেন। থাকার সুবিধাসহ মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ হোটেলটিতে। এছাড়া সারাদিন পরিশ্রম করে শ্রমজীবী মানুষেরা যাতে একটু বিনোদন করতে পারেন এ জন্য টিভি দেখা ও কেরাম খেলার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ হোটেলটিতে। তবে শীতবস্ত্র ও বালিশ যিনি থাকবেন তাকেই সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা থেকে আসা আব্দুল জব্বার নামে এক শ্রমিক বলেন, মানসম্মত না হলেও আমরা মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে এই হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারছি এটাই অনেক বড় পাওয়া। তবে বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে , কোনো দরিদ্র শ্রমিককে টাকার অভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। হোটেলের কোন এ জায়গায় তাদের মাথা গোঁজার একটু ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। বগুড়া জেলার নন্দিগ্রাম থেকে আসা বাচ্চু হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, এখানে তাদের মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই হলেও শত শত শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাট্রিন না থাকায় বেশিরভাগ শ্রমিকেই খোলা মাঠে গিয়ে পায়খানা করতে হয়। মধুপুর হাজী অজেল আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, বছরের প্রায় ৪ মাস বিভিন্ন জেলা থেকে নি¤œ আয়ের মানুষ এ অঞ্চলে এসে কাজ করে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন স্থানে মল ত্যাগ করায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। তাই সরকারি ভাবে এ অঞ্চলে কয়েকটি স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপনের দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, অতি দ্রুতই দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে নিজ উদ্যোগে কিছু স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন করে দিবেন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ,খামারবাড়ী পাবনার উপ-পরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, সুজানগর উপজেলায় এবারে দানা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আর এ পেঁয়াজ রোপনের জন্য প্রয়োজন পড়ে অনেক শ্রমিকের।কিন্তু তাদের ল্যাট্রিনের সমস্যার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দরিদ্র এ সকল শ্রমজীবী মানুষদের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে স্থায়ীভাবে ল্যাট্রিন স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।