এম এ আলিম রিপন
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাবনার সুজানগর উপজেলায় গড়ে উঠেছে তিন ফসলি কৃষি জমিতে অবৈধ ইটভাটা। তিন ফসলি জমিতে এ সকল ইটভাটা নির্মাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকেরা। শুধু তাই নয় অবৈধভাবে নির্মাণ করা এ সকল ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। দেদারছে কাঠ পোড়ালেও সেটা দেখার কেউ নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাটা মালিক জানান, তারা বিভিন্ন সময় সরকারি, বেসরকারি, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের ভাটাগুলোতে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো সহ ভাটার অন্য নিয়ম ভহির্ভূত কোন কর্মকান্ডেই তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তার মতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী হয়। ইটভাটা সংক্রান্ত আইন কানুন সহজ করা হলে একদিকে যেমন আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে,তেমনি সকলেই সরকারি আইন মেনে চলতে পারবেন। জানা যায়,সরকারি নিয়মনীতি না মেনে সুজানগর উপজেলায় অবৈধভাবে তিন ফসলি কৃষি জমি গ্রাস করে গড়ে উঠেছে ১০টির অধিক ইটভাটা । অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসকল ইটভাটার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকেরা,কমেছে কৃষি জমি,বাড়ছে পরিবেশ দূষণ । ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষি জমি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বনভূমি,অভয়ারণ্য,জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকায় ও বছরে একের অধিক উৎপাদিত ফসলী কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা নিষেধ রয়েছে । কিন্তু সে আইন লঙ্ঘন করে সুজানগর উপজেলার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। এতে ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া অতি সহজেই লোকালয় ও ক্ষেত-খামারে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয় গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহার করে ভারী যানবাহন দিয়ে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাকা রাস্তা। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ইটভাটা তৈরি করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স,বিএসটিআই এর সনদ, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র,জেলা প্রশাসক প্রদত্ত লাইসেন্স, কৃষি অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন পত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করতে হয়। কিন্তুু উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটারই লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র নেই। আর যাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে,সে সকল ভাটা মালিক প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ভ্যাট দিচ্ছে সরকারকে। অথচ অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। শুধু তাই নয় নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ইটের পরিমাপ ৭.৩০ এবং ৩.৭৫ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও ইটভাটানিয়মনীতি উপেক্ষা করে এক শ্রেণীর ভাটা মালিক তাদের ইচ্ছেমত ইটের ওজন ও সাইজ তৈরি করে অবাধে বিক্রি করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম জানান, উপজেলায় যে কৃষি জমি রয়েছে সে সকল জমির বেশিরভাগই দুই বা তিন ফসলী জমি, আর এ ধরনের জমিতে ইটভাটা করার কোন নিয়ম নাই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) সুখময় সরকার শনিবার জানান, যে সকল ইটভাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই সেই সকল ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।