ঈশ^রদী সংবাদদাতাঃ
জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত ঈশ^রদীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কাগজে-কলমেই শুধু ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ। অনুমোদিত জনবল, যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ন্যুনতম চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ঈশ^রদীবাসী। ঈশ^রদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ইপিজেডে পাঁচ সহ¯্রাধিক বিদেশীসহ বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কর্মরত। এছাড়াও উপজেলায় প্রায় চার লাখ স্থানীয় জনগোষ্ঠির বসবাস। প্রয়োজন ১০০ শয্যার হাসপাতাল। দুর্ঘটনা, ষ্ট্রোক এবং সামান্য জটিল রোগী হাসপাতালে গেলেই রাজশাহী বা অন্যত্র পাঠিয়ে দায়মুক্ত হচ্ছেন ডাক্তাররা। হাসপাতালে ন্যুনতম চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রেফারকৃত রোগী পথেই মারা যায়। বিদেশীদের ক্ষেত্রেও এ ধরণের ঘটনা একাধিকবার ঘটায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
অথচ স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় ১২টি জাতীয় পুরস্কার ও পদক পেয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে জরুরী প্রসূতিসেবা ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এসব পুরস্কারগুলো অর্জন করে। ৫০ শয্যার হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারছেন না। বর্হিবিভাগে রোগীর চাপ, সেবার পরিধি বৃদ্ধি, জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা রোগীর আনাগোনা সব মিলিয়ে কর্মরত চিকিৎসকদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কনসালটেন্ট সংকট।
রোগীর চাপ অনুযায়ী এখানে কনসালটেন্ট সংখ্যা খুবই কম। প্রশাসনিক দপ্তরের অবস্থা আরও খারাপ। কর্তৃপক্ষ বলেছেন, জনবল সংকটের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ সাধারণ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরী বিভাগেও রোগীর চাপ থাকে ২৪ ঘন্টা। ১১ জন কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৪ জন। সাত জনকে দিয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলছে। জরুরী বিভাগে গাইনি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ক্যাশিয়ারের পদ তিন মাস ধরে শূন্য। প্রধান অফিস সহকারী আবুল কাশেম চার মাস আগে অবসরে গেছেন। কেউ না থাকায় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এখনো তিনিই কাজ করছেন। ষ্টোর কিপার ও অফিস সহায়কের পদও তিন বছর ধরে শূন্য। ওয়ার্ডবয় ২ জনের স্থলে ১ জন, বাবুর্চিও ২ জনের পদে ১ জন, সুইপার ৫ জনের স্থলে ৩ জন এবং এমএলএসএম পদের ৪ জনের পরিবর্তে কাজ করছেন মাত্র ২ জন। সবার সমন্বয়ে ম্যানেজ করে কাজ চালানো হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
২,০১১ সালে হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও খাবারের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং সামান্য পরিবর্তন ছাড়া ১২ বছরে কিছু হয়নি। ৫০ শয্যায় উন্নিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে বিশেষজ্ঞ পদ সৃষ্টির কথা বলা হলেও এখানে জনবল অনুমোদন হয়নি। ডাক্তাররা রোটেশন করে দায়িত্ব পালন করেন। এদের বেশীরভাগই জুনিয়র। ল্যাব টেকনিশিয়ান, কম্পাউন্ডার, কার্ডিওগ্রাফার, ল্যাব এ্যাটেনটেন্ড, ওটি বয়সহ অনেকগুলো পদ শুণ্য। চিকিৎসা পরিধি আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন যুক্ত, হয়েছে চক্ষু, ডায়াবেটিক, শিশু চিকিৎসা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান বিভাগের নাজনীন সুলতানা বলেন, কাজের পরিধি বাড়লেও লোকবল সংকট কাটছে না। ম্যানেজ করে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে তো চলা যায় না। লোকবল সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: এফ এ আসমা খান জনবল সংকট, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, টেকনিশিয়ান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভবনেরও সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিতে বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ৫০০- ৬০০ রোগী আসেন। কনসালটেন্ট প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং প্রশাসনিক দপ্তরেও লোকবল সংকট। ইতোপূর্বে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ঈশ^রদীসহ দেশের ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় উন্নিত করণের তালিকা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা থেকে ঈশ^রদী কেটে অন্যত্র নেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এরপরও রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল জানান, হাসপাতালে রোগী গেলেই রাজশাহী, পাবনা বা ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ভেঙ্গে পড়লেও প্রতিকার হচ্ছে না। হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কারণে বিদেশীদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কনসালটেন্সসহ জনবল সংকটে; ঈশ^রদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা
ঈশ্বরদী
3 Mins Read
Previous Articleচাটমোহরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও মিছিল
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment