ঈশ্বরদী সংবাদদাতা:
বাজেট বরাদ্দ না থাকায় ঈশ্বরদীতে নতুন বা পুরাতন সড়ক নির্মান না হওয়ার পাশাপাশি সংস্কার কাজও হচ্ছে না। যেকারণে অধিকাংশ সড়কের এখন বেহাল দশা। এতে পৌরবাসীসহ উপজেলা জুড়ে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। প্রথম শ্রেণীভূক্ত পৌরসভাসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ সড়কই এখন চলাচলের অনুপযোগী। হালকা বৃষ্টিতে ও ভারী যানবহন চলাচলের কারনে এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই চলাচল করছে সাধারন মানুষ ও যানবহন চালকরা।
বিভিন্ন গ্রাম, ওয়ার্ড ও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকার বকুলের মোড় থেকে অরনকোলা, পোষ্ট অফিস মোড় থেকে ইস্তা গোল চত্বর মোড়, রেলগেট থেকে ইপিজেড গেট পর্যন্ত, সাঁড়া গোপালপুরের টিপু সুলতান রোড, সাকরেগাড়ি মোড় থেকে ভাষা শহিদ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রোড, উপজেলা গেট থেকে চানমারী মোড় পর্যন্ত প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কগুলো ভেঙ্গে-চুড়ে গর্তে পরিনত হয়েছে। সেই ভাঙাচোরা গর্তে হালকা বৃষ্টি হলেই জমে থাকছে পানি, সৃষ্টি হচ্ছে কাঁদামাটি। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ছোট-বড় যানবাহনের চালকরা। সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পন্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক চালকসহ পথচারীদের। এসব সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। ভাঙ্গাচোড়া সড়কে যেতে সঠিক সময়ে তারা যেতে পারছেনা কর্মস্থলে।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাটাপাড়া ও ৮ নং ওয়ার্ডের শহীদ আমিন পাড়া এলাকার চারটি সড়ক বিগত ১৭ বছরেও নির্মাণ হয়নি। এ চারটি সড়কে দুটি মহল্লার মানুষ যাতায়াত করে। বৃষ্টি ও বর্ষায় সড়কগুলো যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একাধিকবার পৌরসভায় গিয়ে লিখিতভাবে দরখাস্ত দিয়েও বাজেট বরাদ্দের কারণে নির্মাণ বা সংস্কার সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, পৌরসভার আকবরের মোড় হতে অরনকোলা বটতলা পর্যন্ত এবং টিপু সুলতান রোড সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংস্কার করা হয়। উপজেলা গেট থেকে চানমারী মোড় এবং ইস্তা গোলচত্বর সড়ক ও ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কগুলো এলজিইডির আওতাধীন। উপজেলা গেট থেকে চানমারী মোড় পর্যন্ত ২৭০০ মিটার সড়কটি ৮০ লাখ টাকা ব্যায়ে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্কার করেন এলজিইডি । পৌরসভার আওতাধীন সড়কগুলো ৭ বছর ও এলজিইডির আওতাধীন সড়কগুলো ৩ বছরে কোন নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়নি।
সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা প্রসংগে সাবেক ভিপি আসাদুর রহমান বীরু বলেন, মান উন্নয়নে ঈশ্বরদী একটি পুরাতন শহর ও প্রথম শ্রেণীভূক্ত পৌরসভা। আর সেই পৌরসভার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ অধিকাংশ সড়কের এখন বেহাল দশা। সড়কগুলো ভেঙ্গে খানা-খন্দ আর দুর্ভোগের প্রধান কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কগুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছে অভিভাবকহীন একটি পৌরসভা এটি।
পাকশি এলাকার রিকশাচালক ইউনুস আলী যাত্রী নিয়ে টিপু সুলতান রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “ভোটের আগে উন্নয়নের স্লোগান আর ভোটের পর শুধু বাজেট বরাদ্দের অজুহাত”। তিনি আরও বলেন, রাস্তা ভাঙ্গা হলে নেতাদের যায় আসে না। কারন তারা বড় বড় দামি গাড়িতে চলাচল করে।
সাকরিগাড়ি এলাকার ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শিক্ষার্থী শিরিন আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তা খারাপের জন্য কোন রিকশা,অটোবাইক, সিএনজি আসতে চায়না। প্রায় এক কিলোমিটার এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
নতুনহাট এলাকার শেখ মেহেরুল্লাহ মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী শাহান বলেন, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, প্রকল্পের আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটি ও ইপিজেডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেকারনে বাংলাদেশের মধ্য অন্যতম উপজেলা ঈশ্বরদী। এ উপজেলার সড়কগুলোর এতোটাই ভগ্নদশা যে, রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, এলজিইডি’র আওতাধীন সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফাইল পাঠোনো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে চলমান অর্থবছরেই সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।
পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, রাস্তাগুলো তৈরি হয় ২০ থেকে ২২ টন লোডের গাড়ি চলাচলের জন্য। কিন্তু রাস্তায় ৫০ টন ওজনের মালামাল নিয়ে গাড়ি চলে। এজন্যই রাস্তাগুলো দ্রুত ভেঙ্গে যায়। চেষ্টা করেও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারছিনা। ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে আমরা নতুন একটি (আরএমজিডিপি) প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজন মাপ-যোকও করে নিয়ে গেছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু হবে এবং জনভোগান্তিও কমে আসবে। এছাড়া ওয়ার্ড ভিত্তিক ছোট-ছোট যে সড়কগুলো এখনও নির্মাণ হয়নি, সেগুলো চলতি অর্থবছরেই বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।