নির্মল সরকার
পাবনার বেড়া উপজেলার নদ-নদী,খাল-বিল হাওর-বাওর গুলোতে কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জালে সয়লাব। যার ফলে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ হরেক রকমের দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠামোর চারপাশে ‘চায়না জাল’ দিয়ে ঘিরে এই চায়না দুয়ারি নতুন ফাঁদ তৈরি করা হয়। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফাঁদ দিয়ে উপজেলার নদ-নদী সহ বিভিন্ন জলাশয়ে অভিনব কায়দায় মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির অসৎ জেলে ও মৌসুমি মৎস্য শিকারী। এক্ষেত্রে মানছেন না অসাধু জেলেরা মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য নিধন আইন। যার ফলে কমছে দেশীয় মাছের উৎপাদন। এ জালে মাছ ধরার চিত্র দিনের বেলা কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে অসাধু জেলেদের মাছ ধরার মহোৎসব। এ দৃশ্য চোখে পড়বে উপজেলার কাজীরহাট,নগরবাড়ি,ঢালারচর,বক্তারপুর,নাটিয়াবাড়ি, পাচুরিয়া,চাকলা,তাঁরাপুর,কৈটোলা,আওয়ালবাঁধ,নাকালিয়া,পেচাকোলা,মোহনগঞ্জ,চর সাঁড়াশিয়া সহ নদীর তীরবর্তী অসংখ্য জনপদ গুলোতে। স্থানীয় বাজার থেকে অবৈধ এসব নিষিদ্ধ জাল কিনে এনে বিভিন্ন জলাশয় গুলোতে ব্যবহার করে নিধন করা হচ্ছে পোনা জাতীয় ছোট মাছ এবং ডিমওয়ালা মা মাছ।
সেই সাথে নিধন হচ্ছে কাঁকড়া,কুঁচিয়া,ব্যাঙ,শামুক,জোঁক,কচ্ছপ সহ বিভিন্ন রকমের জলজ প্রাণী। এ জাল ব্যবহারের প্রভাবে জীবন বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে এবং ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল এবং এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়,অসৎ মৌসুমি জেলেরা এসব কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছেন।স্থানীয়দের অভিযোগ মৎস্য বিভাগের অৎপরতায় জাল ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট গভীর সখ্যতায় প্রতিটি বাজারে হরহামেশাই ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী সহ দেশীয় মাছ শিকারের বিভিন্ন ফাঁদ। উপজেলার চর সাঁড়াশিয়া গ্রামের কৃষক আ,সাত্তার বলেন, ভয়ংকর চায়না দুয়ারী জালে উভয় দিক থেকে ছুটে আসা যেকোনো মাছ খুব সহজেই এই জালে আটকা পড়ে যায়। একবার আটকে গেলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মাথায় আসেনা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে অসাধু মৌসুমি জেলেরা এ কাজ করছে। নাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো, আতিকুর রহমান আতিক বলেন,ভয়ংকর চায়না দুয়ারী এসে আমাদের দেশীয় মাছ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেশীয় মাছ সম্বন্ধে কোনো ধারণা থাকবে না।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো, নাসির উদ্দীন এ প্রতিবেদককে জানান,জুন থেকে আগষ্ট এই তিন মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়া মডেল থানা পুলিশ,আমিনপুর থানা পুলিশ ও নগরবাড়ী নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।