এম এ আলিম রিপন,সুজানগরঃ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৯২৬৮তম হয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পাবনার সুজানগরের দরিদ্র পরিবারের সন্তান তুষার মাহমুদের। ভর্তি পরীক্ষায় তিনি পেয়েছেন ৫৩.৭৫ নম্বর। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল তুষারের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরেছে। ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ,কে দেবেন অর্থের যোগান এই শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের সন্তান তুষারের। তুষার পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের তৈলকুন্ডু গ্রামের শাহজাহান আলী ও মোছা.শিউলি খাতুনের সন্তান। ৩ সন্তানের মধ্যে তুষার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তুষারের পিতা একজন দরিদ্র দিনমজুর হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। তুষারের পিতার নিজ বাড়ির জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। একটি টিনের ঘর সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সকলে। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় পিতার। ভর্তি ও পড়ার খরচ যোগানোর সামর্থ্য তার পিতার নেই। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে যে টাকা রোজগার করেন সেই টাকা দিয়েই কোন রকম কষ্টে পরিবারের সদস্যদের মুখের আহার তুলে দেওয়া সহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই সংসার চালানো যেখানে দায়,সেখানে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো তার কাছে দুঃস্বপ্ন। তুষার ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, সে বোনকোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণের জন্য সে অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না তুষার। তুষার জানান, স্কুল কলেজে পড়াশুনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না । একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন,আমি তাতেই খুশি থাকতাম। কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় আত্মীয় স্বজনেরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের হারুন-অর-রশিদ স্যার ও রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ের মিলন স্যার আমাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়াতেন তুষার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। আমার বাবার পক্ষে পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব না। প্রথম বর্ষের ভর্তি ও বই কেনার টাকা দিয়েও যদি কেহ আমার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতো তাহলে পরবর্তীতে হয়তো আমি নিজে পড়াশুনার পাশাপাশি স্কুল ছাত্রদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। স্থানীয় একাবাসী জানান, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান তুষার সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। এবং সে এলাকাবাসীর মুখ উজ্জল করেছে। প্রশাসন সহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে তুষারের বিশ্ববিদ্যালয়ের পশাশুনা আটকাবে না। যদি কেউ সাহায্য পাঠাতে চান তাহলে ০১৭০৫৩৭৯৩৪৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।