এম এ আলিম রিপন
ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটলো দারিদ্রকে জয় করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৯২৬৮তম হয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া পাবনার সুজানগরের দরিদ্র পরিবারের সন্তান তুষার মাহমুদ। এই মেধাবীর ভর্তি ও বই কেনার অর্থ দিয়েছেন সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.তরিকুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্ত নামে এক শিক্ষার্থী। রবিবার সর্বমোট ২৫ হাজার নগদ টাকা মেধাবী শিক্ষার্থী তুষারের হাতে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.তরিকুল ইসলাম। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি এম এ আলিম রিপন, আমরা সুজানগরবাসী ফেসবুক গ্রুপের মাসুদ রানা ও মেধাবী শিক্ষার্থী তুষারের মা মোছা.শিউলি খাতুন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বুধবার অনলাইন পত্রিকা,আমরা সুজানগরবাসী ফেসবুক গ্রুপ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত তুষারের শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।এরপর বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.তরিকুল ইসলাম ও জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্ত নামে এক শিক্ষার্থীর নজরে আসলে দরিদ্র পরিবারের সন্তান তুষার মাহমুদের দিকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তারা। এছাড়াও সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন দরিদ্র পরিবারের মেধাবী এ ছাত্রের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৯২৬৮তম হয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় তুষার। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার। ভর্তি পরীক্ষায় তুষার পায় ৫৩.৭৫ নম্বর। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরে। ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ,কে দেবেন অর্থের যোগান এই শঙ্কায় দিন কাটছিলো দরিদ্র পরিবারের সন্তান তুষারের। তুষার পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের তৈলকুন্ডু গ্রামের শাহজাহান আলী ও মোছা.শিউলি খাতুনের সন্তান। ৩ সন্তানের মধ্যে তুষার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তুষারের পিতা একজন দরিদ্র দিনমজুর হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। তুষারের পিতার নিজ বাড়ির জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। একটি টিনের ঘর সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সকলে। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় পিতার। ভর্তি ও পড়ার খরচ যোগানোর সামর্থ্য তার পিতার নেই। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে যে টাকা রোজগার করেন সেই টাকা দিয়েই কোন রকম কষ্টে পরিবারের সদস্যদের মুখের আহার তুলে দেওয়া সহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই সংসার চালানো যেখানে দায়,সেখানে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো তার কাছে দুঃস্বপ্ন। তুষার ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, সে বোনকোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে তা মেনে নিতে পারছিলেন না তুষার। অবশেষে তার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।