চাটমোহর প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে সোনালী আঁশ পাটের দাম কমেই চলেছে। পাটের বাজার সিন্ডিকেট দখল করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকেরা। এখন হতাশাগ্রস্ত কৃষক। এ বছর পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ পাট চাষীরা। পাবনা জেলায় চলতি বছরে পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে,তেমন বেড়েছে উৎপাদন খরচও। পাট জাগ দেওয়া নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় চাষীদের। এসবের পরে পাট বিক্রি করতে গিয়ে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায়, সোনালি আঁশ নিয়ে হতাশায় কৃষক। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন চাষিরা।
চাটমোহরের সর্ববৃহৎ পাটের হাট অমৃতকুন্ডা (রেলবাজার)। এছাড়া শরৎগঞ্জ,ছাইকোলা,মূলগ্রাম,পাচুরিয়া,পৌরসভা নতুন হাট ও হান্ডিয়াল হাটেও পাট বেচাকেনা হয়। এসব হাটে পাটচাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাট কেনা-বেচা করেন। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে অমৃতকুন্ডা হাটে গিয়ে দেখা যায়,পাটের হাট জমে উঠেছে।
চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা ও শরৎগঞ্জ হাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,ভোরের আলো না ফুটতেই কৃষকরা পাট নিয়ে হাটে আসছেন। গরুর গাড়ি,কেউবা করিমন,নসিমন ও অটোভ্যানে করে পাট নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বেশি দামের আশায় বাজারে পাট নিয়ে এলেও হঠাৎ দরপতনে হতাশ তারা। গত হাটে পাটের সর্বোচ্চ দাম ২৬৫০ টাকা থাকলেও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বর্তমান ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে নেমে এসেছে।
কৃষকরা বলছেন,অসাধু ব্যবসায়ীরা পাটের দাম কমানোর জন্য অজুহাত খোঁজে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,দেশের বাজার ব্যবস্থা অনুযায়ী দাম দিয়ে পাট ক্রয় করা হচ্ছে। বেশি দাম দিয়ে কিনলে বড় বড় আড়তদাররা বেশি দাম দিতে চায় না। বাধ্য হয়ে এমন দামে কিনতে হয় তাদের।
অমৃতকুন্ডা হাটে এসেছেন ফৈলজানা গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ফলন মোটামুটি হয়েছে। বাজারে বিক্রি করতে এসে দেখি ২২০০ টাকা করে ব্যবসাযীরা দাম বলছে। গত হাটেও পাট বিক্রি করেছি ২৬০০ টাকা করে। সিন্ডিকেট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা পাট কম দামে কিনতেছে। পাট বিক্রি করে খরচই উঠছে না। এ দামে পাট বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরিও হয় না।
পাট বিক্রি করতে ছাইকোলা থেকে এসেছেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন,নসিমনে করে ভোর ৪টার দিকে হাটে পাট নিয়ে এসেছি। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে যে পাটের দাম কমিয়েছে। পাটের বাজার এখন সিন্ডিকেটের দখলে। তাদের জন্য আমরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। একেক হাটে যদি একেক দামে পাট বিক্রি হচ্ছে।
চাটমোহরের পাট ব্যবসায়ী আসাদুর রহমান বলেন,সরকার বিদেশ থেকে পাট আমদানি করায় কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অনেক পাট ক্রয় কেন্দ্র বন্ধ হওয়াতে আমরা আরও বেশি বিপদে আছি। এসব পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করলে কৃষকরা এবং আমরা স্বস্তি পেতাম। তিনি বলেন,গত বছরে এই সময়ে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবছর সবচেয়ে ভাল পাট আমরা ২৪শ থেকে ২৬শ টাকা করে কিনতেছি। আসলে দেশে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মহাজনরা যেভাবে পাট নেন,আমরা সেভাবেই কিনি। আমরা পাবনার বিভিন্ন হাট থেকে পাট কিনে নাটোর,খুলনা,কুষ্টিয়া,বগুড়ার বড় বড় আড়ৎদারদের কাছে পাইকারি বিক্রি করি।
চাটমোহরে এচছর ৮ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। গত বছরে আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে ১ লাখ ৩০ টনের বেশি পাট উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুমবিল্লাহ বলেন,এ বছর পাট আবাদের শুরুতেই বৃষ্টি হওয়াতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরপর পাট কাটার শুরুতে পানি না থাকায় কৃষকরা বিড়ম্বনার শিকার হলেও পরে বৃষ্টি হলে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছে। যার জন্য এবার সব দিক থেকেই কৃষকরা সুবিধা পেয়েছে। শুরুতে পাটের বাজার দর ২৬০০ টাকায় কৃষকরা খুশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দাম নামল কি জন্য সেটা বুঝে আসছে না।
বাজার সিন্ডিকেটের দখলে কমেই চলেছে পাটের দাম
চাটমোহর
3 Mins Read
Previous Articleপাবনার দোগাছিতে ভাতাভোগীদের লাইফ ভেরিফিকেশন উদ্বোধন
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment