চাটমোহর প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার সীমান্তে চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ গ্রামের মসজিদের নামকরণ নিয়ে দুই উপজেলার দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক পক্ষের বিরুদ্ধে রঙ দিয়ে মসজিদের নাম মুছে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে পাবনার চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের খৈরাশ বাজারের পাশেই রয়েছে খৈরাশ জামে মসজিদ ও কবরস্থান। এই মসজিদ ও কবরস্থানে খৈরাশ ও পাশের বড়াইগ্রাম উপজেলার দিয়ার গাড়ফা গ্রামের বাসিন্দারা ব্যবহার করেন। ফলে এগুলোকে ডিকে (দিয়ার গারফা-খৈরাশ) জামে মসজিদ ও কবরস্থান বলা হয়। পূর্বপুরুষের আমল থেকে দুটি গ্রামের বাসিন্দারা যৌথভাবে এই দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবহার করে আসছেন।
বছর দুই আগে মসজিদটির নাম একটু পরিবর্তন করে ডিকে বায়তুশ শেফা জামে মসজিদ,খৈরাশ বাজার,চাটমোহর,পাবনা লেখা হয়। সম্প্রতি এই নাম নিয়ে আপত্তি জানায় দিয়ার গাড়ফা গ্রামের বাসিন্দারা। মসজিদটির নাম পূর্বের নাম রাখতে অর্থাৎ ডিকে বাজার জামে মসজিদ নাম রাখতে দাবি জানায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কাছে। এই নিয়ে খৈরাশ গ্রামের প্রধানরা বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু নাম পরিবর্তন করার পর থেকে দিয়ার গারফা গ্রামের লোকজন ফুঁসে উঠতে থাকে৷ গত বৃহস্পতিবার মাইকিং করে দিয়ার গারফা গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে সভা করে। সেই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে ওই গ্রামের অন্তত ৫ শতাধিক মানুষ চাটমোহরের খৈরাশ বাজারে গিয়ে মসজিদের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেয়। সেখানে প্রকাশ্যে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে খৈরাশ গ্রামের লোকজনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় দিয়ারগাড়ফা গ্রামের লোকজন। তারা জানায় যদি মসজিদের নামের সাথে ‘খৈরাশ বাজার,চাটমোহর,পাবনা’ লেখা যাবেনা। ডিকে বাজার জামে মসজিদ লিখতে হবে। না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেইসাথে খৈরাশ গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান তারা। এসময় খৈরাশ গ্রামের লোকজনের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ এবং ডিবিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তবে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন,ডিবিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান শামীম হোসাইন,চাটমোহর থানার এসআই শামসুল ইসলাম ও সরোয়ার হোসেন,বড়াইগ্রাম থানার এসআই রফিকুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম,ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাফফর আলী মন্ডলসহ দুই গ্রামের প্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
খৈরাশ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান,আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দিয়ার গারফা গ্রামের মানুষের সমস্যা তারা মসজিদের নামের সাথে খৈরাশ বাজার লিখতে দেবে না। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান কাগজে কলমে চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ বাজারে। প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম চাটমোহর উপজেলার সাথে। খৈরাশ হাটের ইজারাও হয় চাটমোহর উপজেলা থেকে। কিন্তু এই বিষয়টি মানতে চায়না দিয়ার গাড়ফা গ্রামের লোকজন। তারা জোরপূর্বক ডিকে বাজার অর্থাৎ দিয়ার গাড়ফা-খৈরাশ বাজার লিখতে চাচ্ছে। তারপরও আমরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই দিয়ার গাড়ফা গ্রামের লোকজন সকালে এসে মসজিদের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেয় এবং প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়।
দিয়ার গাড়ফা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোনাউল্লাহ বলেন,মসজিদ ও গোরস্থানে দুই গ্রামের লোকজনের অনুদান সহায়তা রয়েছে। পরিচালনা কমিটিতেও দুই গ্রামের লোকজন থাকে। পূর্বপুরুষের আমল থেকেই মসজিেেদর নাম ডিকে বাজার জামে মসজিদ হিসেবে নামকরণ হয়ে আসছে। কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ করে আমাদের সাথে আলোচনা না করে কেন নাম পরিবর্তন করা হলো। আমরা গন্ডগোল চাইনা। কিন্তু খৈরাশ গ্রামের লোকজন আমাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই আগের নাম বহাল থাকুক। তবে কাউকে কোন হুমকি দেওয়া হয়নি।
খৈরাশ গ্রামের বাসিন্দা ও ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ওয়াহেদ আলী বলেন,দিয়ার গারফা গ্রামের লোকজন জোর জবরদন্তি শুরু করেছে। এক উপজেলার বাজারের নাম অন্য উপজেলার গ্রামের নামে হতে পারেনা। তিনি বলেন,ওসি সাহেব এসে দুই চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সুষ্ঠু সমাধোনের জন্য।
ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম হোসাইন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক৷ আমরা দুই পক্ষকে বুঝিয়ে শান্ত করেছি৷ খুব শীঘ্রই আমরা একটি দিন করে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবো। যাতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো ন্যাক্কারজনক ঘটনা না ঘটে।
চাটমোহর থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন,এতদিন ধরে এই সমস্যা চলছে,অথচ কেউ পুলিশকে জানায়নি,কেউ সমাধান করতে পারেনি। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে যেটা করা হয়েছে,সেটি খারাপ কাজ হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। দুই থানা পুলিশ সার্কেল স্যারদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধান করা হবে। সে সময় পর্যন্ত দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
চাটমোহরের সীমান্ত গ্রাম খৈরাশে জোরপূর্বক মসজিদের নামকরণের অপচেষ্টা নিয়ে দু’গ্রামবাসীর মাঝে উত্তেজনা
চাটমোহর
4 Mins Read
Previous Articleসুজানগর আল্-ইহ্সান একাডেমিতে অভিভাবক সমাবেশ
এই সম্পর্কিত আরো খবর পড়ুন
Add A Comment