চাটমোহর প্রতিনিধি
দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গরুর চামড়ার দাম মাত্র ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা আর খাসির চামড়া ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এই হলো এবারে কোরবানী পশুর চামড়ার দাম পেয়েছেন গ্রামাঞ্চলে যারা কোরবানী দিয়েছেন তারা। চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারেরা গত বছর যে দামে চামড়া কিনেছেন,এবারও সেই দামে কিনছেন। কম দামে চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে চুপচাপ বসে আছেন। যার কারণে ঈদের দিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকের বাড়িতেই পড়ে ছিল চামড়া। কেনার জন্য কেউ যাননি। যাঁরা চামড়া বিক্রি করতে বের হয়েছেন,তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাঙ্খিত দাম পাননি। মৌসুমী ব্যবসায়ী ও আড়দদার সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ চামড়া বিক্রি করতে আসা লোকজনের।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ঈদের দিন দুপুর ১২টার দিকে গরুর যে চামড়া ৮০০/৯০০ টাকা দাম বলা হয়,দুপুরের পর সেই চামড়ার দাম ৬০০/৭০০ টাকার বেশি কেউ বলে না।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী যাঁদের স্থানীয়ভাবে ফড়িয়া বলা হয়,তাঁরা জানান,গত কয়েক বছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিনে তাঁদের লোকসান হয়েছে। এ কারণে এবার তাঁরা চিন্তাভাবনা করে চামড়া কিনেছেন বলে জানান।
চাটমোহর পৌর শহরের ছোট শালিখা মহল্লার নজরুল ইসলাম জানান,সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাঁর খাসির চামড়া ১০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। মোঃ আজিম উদ্দিন জানান,গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে ৬৫০ টাকায়। তিনি জানান,পুরো বাজারের ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে দাম কম দিয়েছেন।
গুনাইগাছা এলাকার বাসিন্দা আসাদুর রহমান জানান,তাঁদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরু কোরবানির পর থেকে চামড়া দীর্ঘ সময় বাড়িতে পড়ে ছিল। দুপুর ২টার দিকে একজন ক্রেতাকে ডেকে এনে তাঁর কাছে মাত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকার ওপরে কেউ কেনেনি।
চামড়া ব্যবসায়ী ছোট শালিখা নিশিপাড়ার সুনীল দাস বলেন,ব্যবসায়ীদের আড়তে এখনো চামড়া কেনা শুরু হয়নি। মাঠপর্যায়ে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছে। তাঁরা হয়তো বাড়তি লাভের আশায় অথবা ভালো মানের চামড়ার সঙ্গে খারাপ মানের চামড়ার গড় করতে কম দামে চামড়া কিনছেন। তবে আড়তে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কেনা হবে বলে জানান তিনি। এতে ভালো মানের চামড়ার দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হওয়ার কথা।
আরেক ব্যবসায়ী সুকুমার দাস বলেন,গ্রামে গ্রামে ঘুরে যারা চামড়া কিনেছেন,তারা কম দামেই কিনেছেন। আমরা চামড়া প্রক্রিয়া করে নাটোরের আড়তে দিয়ে থাকি। সেখানে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা হচ্ছে। নগদ টাকার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নেন নাই। এ কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজ দায়িত্বে চামড়া কিনছেন। আমরা চামড়া বিক্রি করতে না পারলে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবো।