।। রফিকুল ইসলাম সুইট ।।
আজ শুক্রবার ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। আজ শুধু বর্ষবরণ নয়, বাঙালির প্রাণের আর মনের মিলন ঘটার দিন আজ। বাঙালির অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসবে যোগ দেবে সারাদেশ। বাঙালি বাংলা ১৪৩০ সালকে বরণ করে নেবে সব বিভেদ, জরা আর দুঃখকে ভুলে। যা পুরনো আর জীর্ণ- তাকে বাদ দিয়ে বাঙালি গাইবে নতুনের গান। প্রার্থনা একটাই- শুভ মঙ্গল আলোয় ভরে উঠুক বাঙালির জীবন। পরাভূত হোক সকল অশুভ শক্তি।
যখন স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রকাশ্য উৎপাত নেই অথচ নানা ছলে-কৌশলে সামনে আসার চক্রান্ত করছে, যখন বাঙালির গৌরবের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে তখন- পহেলা বৈশাখ নতুন তাৎপর্য নিয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছে। আজ শুধু উৎসব নয়, নতুন করে জেগে ওঠার দিন। সমাজের সকল অন্যায়, অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেয়ার দিন। আজ ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখার শপথ নেয়ার দিন। বাঙালির চেতনাবিরোধী অপশক্তি রুখতে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে বাংলাদেশ।
পুরনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করবে বাংলাদেশ। দুই হাতে অন্ধকার ঠেলে, সকল ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে উঠবে বাঙালি। আজ অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের পহেলা বৈশাখ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আজ একাত্মা হয়ে গাইবে- এসো, এসো, এসো হে বৈশাখৃ। আনন্দে উৎসবে মাতবে গোটা দেশ।
ধুলোপড়া অতীত পেছনে ফেলে আবহমান কাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। এর প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। এক সময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। তবে রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে বিশেষভাবে দৃশ্যমান হতে থাকে পহেলা বৈশাখ। ষাটের দশকে বাঙালি চেতনাবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে রমনার বটমূলে শুরু হয় বৈশাখ উদযাপন। এর মাধ্যমে বাঙালি আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তী সময়ে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে পহেলা বৈশাখের। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবসটি বর্তমানে বাঙালির জাতিসত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে গভীরভাবে বিরাজ করছে।
আজ নতুন বছরকে বরণ করে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। হালখাতা খুলবেন ব্যবসায়ীরা। নববর্ষ বরণে রাজধানীসহ সারাদেশ একযোগে চলবে লোকজ ঐতিহ্যের নানা অনুষ্ঠান। আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে নববর্ষের বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশন-রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
বৈশাখের একটি প্রচন্ড শক্তি আছে। আর বাঙালি এই শক্তিকে ধারণ করে বিদায় করে সব অশুভকে। গড়ে তোলে সত্য আর সুন্দর এক সামাজিক জীবন। শক্তিকে ধারণ করে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে।
পাবনা জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা পৌরসভা, বনমাল শিল্পকলা কেন্দ্র, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, পাবনা প্রেস ক্লাব, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরী, গণশিল্পী, ড্রামা সার্কেল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন উৎসাহ উদ্দীপনায় দিবসটি উৎদযাপন করবে।
সকাল ৯ টায় বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গিয়ে শেষ হবে। সাড়ে ৯ টায় পুরুস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছে।